কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সমূহ
কক্সবাজার
কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর, মৎস্য বন্দর এবং পর্যটন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার সদর দপ্তর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকিতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত, যা ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত।
এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিক স্ট্যাশন।এক সময় কক্সবাজার প্যানোয়া নামেও পরিচিত ছিল যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। এর আরও একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে পালংকি।
কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সমূহ নীম্নে
- কুদুম গুহা
- রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
- মহেশখালী দ্বীপ
- রামু রাবার বাগান
- রামু বৌদ্ধ বিহার
- শামলাপুর সমুদ্র সৈকত
- মারমেইড ইকো রিসোর্ট
- শাহপরীর দ্বীপ
- সোনাদিয়া দ্বীপ
- কুতুবদিয়া দ্বীপ
- হিমছড়ি ঝর্ণা
কুদুম গুহা
কুদুম গুহা(kudum cave) কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন গুহা।কক্সবাজার থেকে টেকনাফ আসার পথে হোয়াইকং পাহাড়ে কুদুম গুহার অবস্থান। এটি বাংলাদেশের একমাত্র বালু-মাটির গুহা। মনোরম পাহার ঘেরা পরিবেশ,পাখির ডাক আর বন্যপ্রাণির আনাগোনাময় এই গুহাটি পর্যটকদের কাছে দারুন আকর্ষণীয়।
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার ফুট উপরে অবস্থিত এই কুদুম গুহার দৈর্ঘ্য ৫০০ ফুট এবং প্রবেশ মুখ ১২ ফুট উচু। কুদুম গুহাকে স্থানীয়দের কাছে কুদুং নামে বেশি পরিচিত। অসংখ্য বাদুড়ের আশ্রয়স্থল হওয়ায় এটিকে বাদুর গুহাও বলে। সাধারনত কুদুম গুহায় দুই ধরনের বাদুরের দেখা মিলে। এছাড়াও বিভিন্ন রকমের শামুক,মাকড়সা সহ জলচর জোক সহ নানা প্রাণীদের বসবাস এই গুহাতে। এই গুহার ভিতর ঢুক্লে কথাও হিম শীতল জলের দেখা মিলবে আবার কথাও কোমর আবার কথাও গলা সমান পানি পাবেন।
গুহার দেওয়ালের গা বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে সবসময় পানি পরে। গুহার যত ভিতরে প্রবেশ করা যায় তত পানি বাড়তে থাকবে। শুকনো মৌসুমে গুহার ভিতরে কোমর সমান পানি থাকে। তবে বর্ষার সময় সেটা প্রায় গলা সমান হয়ে যায়। গুহার পানি বেশ ঠান্ডা কিন্তু স্বচ্ছ। কুদুম গুহার ভিতর এতটাই অন্ধকার যে জোড়ালো আলো ছাড়া এর ভিতরে কিছুই দেখা যায়না।
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড (Radiant Fish World) পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ঝাওতলায় অবস্থিত একটি ফিস অ্যাকুরিয়াম এবং ফিস মিউজিয়াম। অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সে আছে সাগর ও মিঠা পানির প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। বিরল প্রজাতির মাছ সহ এখানে আছে হাঙ্গর,পিনারহা, শাপলা পাতা,পান পাতা,কাছিম,কাকড়া,সামুদ্রিক শৈল,পতম্বরী, সাগর কুচিয়া,বোল,জেলিফিস,চেওয়া, পাঙ্গাশ, আউস সহ আরও অনেক মাছ এবং জলজ প্রাণী।
ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুকুর ও সাগরের তলদেশের বৈচিত্রময় পরিবেশ। ভেতরের সুন্দর ডেকোরেশন অ্যাকুরিয়ামকে আরও নান্দনিক করে তুলেছে। অ্যাকুরিয়ামে ঢুক্লে মনে হবে সাগরের তলদেশে আছে, আর আপনের চারপাশে খেলা করছে নানা প্রজাতির মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী। ইচ্ছে করলে দেখতে পাবেন থ্রিডী শো। পুরো অ্যাকুরিয়ামটি ঘুরে দেখতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা।
কক্সবাজার শহরের ঝাওতলায় নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিস অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সটি মোট ৮টি জোনে ভাগ করা হয়েছে।৮টি জোনের মধ্যে রয়েছে থ্রে-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস,দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি,ছবি তোলার আকর্ষণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব,কেনাকাটা করার জন্য দোকান যেখানে হস্তশিল্প অনেক ধরনের জিনিস পাবেন আরও বিভিন্ন ধরনের প্রয়জনীয় সামগ্রিক।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পর্যটক কেন্দ্র যা কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। বিশ্বের সবথেকে বড় সমুদ্র সৈকতের জন্য এটি সারা বিশ্বের কাছে সমাদ্রিত যা কক্সবাজার শহর থেকে বদর মোকাম পর্যন্ত একটানা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। সারি সারি ঝাও বন, পাহাড্ ঝর্ণা, বালুর নরম বিছানা এবং বিশাল সমুদ্র সৈকত।
বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি আর শ স্ব গর্জনে মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের আরেক নাম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এছাড়া কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সাথে দেখে নিতে পারেন-বাংলাদেশের একমাত্র ্প্রবালদ্বীপ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, সোনাদিয়া দ্বী্প, পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী, লাইট হাউজের দ্বীপ কুতুবদিইয়া, হাজার সাফারি পার্ক, মাতারবাড়ি শাহপরীর দ্বীপ। এছাড়াও কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড় ঘেঁষে বানানো মেরিন ড্রাইভ আপনার কক্সবাজার ভ্রমঙ্কে করবে আরও আনন্দময়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে দর্শনীয় স্থান-
- লাবনী পয়েন্ট
- পাহার ঝর্নার হিমছড়ি
- পাথুরে সমুদ্র সৈকত ইনানী
- নাইক্ষ্যংছড়ি লেক ও ঝুলন্ত ব্রীজ
- রামু বৌদ্ধ বিহার
- ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
- কলাতলী বীচ
- মেরিন ড্রাইভ
- রেডিয়েন্ট ফিস অ্যাকুরিয়াম
- প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন
মহেশখালী দ্বীপ
মহেশখালী দ্বীপ কক্সবাজার জেলার একটি পাহাড়ি দ্বীপ কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র বার কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝে অবস্থিত। প্রায় ৩৬২ বর্গমিটার আয়তনের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা নামেও তিনটি দ্বীপ রয়েছে। ১৮৫৪ সালে গড়ে ওঠায় এই দ্বীপ পান, মাছ, শুটক্ চিংড়ি, লবনমুক্তা উৎপাদনের কারণে সুনাম অর্জন করলেও এখানকার মূল আকর্ষণ মিষ্টি পান।
মহেশখালী এই মিষ্টি পানির জন্য বিখ্যাত। ধারণা করা হয়, প্রায় ২০০ বছর পূর্বে বৌদ্ধ সেন মহেশ্বরের নাম অনুসারে এই স্থানটির নামকরণ হয় মহেশখালী। যদিও অনেকের মতে, এই শিবের নাম অনুসারে জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে।
মহেশখালী দ্বীপের দর্শনের স্থান
মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। এই দ্বীপটি আবার তিনটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। ফাল্গুন মাসে এই দ্বীপে আয়োজন করা হয় আদিনাথ মেলা। মহেশখালীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম-
- সোনাদিয়া দ্বীপ
- আদিনাথ মন্দির ও আদিনাথ মেলা
- বৌদ্ধ কেয়াং বা মন্দির
- রাখাইন পাড়া
- স্বর্ন মন্দির
- মৈনাক পর্বত
রামু রাবার বাগান
১৯৬০-৬১ সালে অনাবাদি জমি জরিপ করে গবেষণার মাধ্যমে রামুতে রাবার চাষাবাদ শুরু করা হয়। পর্যটন স্থান হিসেবে দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে বাগানের বিস্তৃতি ২হাজার ৬৮২ একর। এর মধ্যে ১১৩০ এলাকা থেকে লিকুইড বা কোষ সংগ্রহ করা হয়। রামুর রাবার বাগানে উৎপাদন ক্ষম গাছ আছে প্রায় ৫৮ হাজার।
এসব গাছ থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কেজির আবার উৎপাদন করা হয়। রামুর আবার বাগানের জন্য বিখ্যাত এ বাক্যটি। পাঠ্যপুস্তকেও পড়ানো হয়। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক রামুর রাবার বাগান পরিদর্শন করতে আসেন। পাহাড় আর সমতলের অপূর্ব মিলনের দৃশ্য উপভোগ করে মুগ্ধ হন ভ্রমণ পিপাসুরা। এখানে বাগান কর্তৃপক্ষের একটি দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার রয়েছে।
রাবার গাছের সবুজ পাতাগুলো বাতাসে দুলছে। ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, টিলা ও বৃস্ত্বত তো সমতল পাহাড়ের মধ্যে এর আবার বাগানের চারপাশে তাকালেও দেখা মিলবে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। যারা রামুর বৌদ্ধ মন্দির দেখতে যাবেন তারা চাইলে একসাথে রাবার বাগান ঘুরে আসতে পারেন।
রামু বৌদ্ধ বিহার
বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলার রামু। ঐতিহ্যবাহী বদ্ধ পুরা কীর্তি সমৃদ্ধ। রামু তো রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন। এগুলোর মধ্যে রামু বদ্ধমন্দির, বিহার ও চৈত্য-জাদি উল্লেখযোগ্য। রামুতে প্রায়ই ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির বা কাং ও জাদি রয়েছে। বৌদ্ধ ঐতিহদের মধ্যে রামুর লামারপাড়া ক্যাং, কেন্দ্রীয় সীমা বিহা্র, শ্রী স্কুলের মৈত্রী বিহার, অর্নচরন মন্দির,সগ=হ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহার,শ্রীকুলের চেরেংঘাটা বড় ক্যাং সংলগ্ন মন্দির সমুহ,রামকোট বনাশ্রম বিহার।
পূর্ব রাজাকুল বৌদ্ধ বিহার, চাতফা চৈত্য জাদি, উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞা বন বিহার সংলগ্ন মন্দির উল্লেখযোগ্য। রামুর এই বৌদ্ধ ঐতিহ্য অতীত কাল থেকে গৌরবময় সাক্য বহন করে আসছে। এখনকার বৌদ্ধ বিহার ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পরিদর্শনে সারা বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা যায়। আর পর্যটন নগরী হওয়ায় পর্যটকদের কাছে এগুলো আকর্ষণ অনেক বেশি। রামকোট বোন আশ্রম বৌদ্ধ বিহার চৌমুহনী স্টেশন তিন কিলোমিটার দক্ষিণে রাজারকুল এলাকায় পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত।
কুতুবদিয়া দ্বীপ
কুতুবদিয়া দ্বীপ প্রায় 216 বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি দ্বীপ কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে এখানকার বৈদ্যুতিক চাহিদা মিটানো হয়ে থাকে। এখানে আছে নানান বৈচিত্র নির্জন সমুদ্র সৈকত, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্্ লবণ চাষ, বাতিঘ্ কুতুব আউলিয়ার মাজার সহ দেখার মত অনেক কিছু।
হিমছড়ি ঝর্ণা
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র বারো কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত হিমছড়ি ইকোপার্ক পর্যটন কেন্দ্র। টিকিট কেটে এখানে ঢুকতে হয়। ভেতরের পরিবেশটা বেশ সুন্দর। এখানে একটি ছোট ঝর্ণা রয়েছে যা হিমছড়ি ঝর্ণা নামে পরিচিত। ঝরনাটি ছোট কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এটি দারুন রূপ ধারণ করে।
লেখক এর মতামত
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার নিয়ে বাঙালির গর্বের শেষ নেই। এটি বিনোদনের জন্য যেমন অন্যতম প্রাণকেন্দ্র তেমনিভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। প্রতিদিনের দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে উৎসবের আমেদ সৃষ্টি হয়। এতে করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ হয়ে উঠেছে আনন্দময়। তাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url