হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে করণীয়

 

হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে করণীয়

যখনই বুকের ব্যথা অসহায় মনে হবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। যদি আপনি দেরি করেন তাহলে এর ফলাফল আপনাকে বুঝতে হতে পারে। বুকে ব্যথার কিছু কিছু কারণ সরাসরি হৃদ রোগের ঝুঁকিকে নির্দেশ করে।
হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে করণীয়


প্রত্যেকেই কখনো না কখনো বুকে সামান্য ব্যথা অনুভব করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বুকের ব্যথাকে এসিডিটির সমস্যা মনে করে এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিশ্চিত হয়। কিন্তু অনুমানের উপর ভিত্তি করে বুকের ব্যাথা সহজ প্রতিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকায় হার্ট অ্যাটাকের মত ভয়াতের শিকার হতে হয়। বুকে ব্যথার অনেক কারণ হতে পারে। 

কিন্তু বুকের ব্যথার ফলাফল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। কদিন আগে বিশ্ব হৃদপিন্ড দিবস বলা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন আমাদের শরীরের ব্যাপক স্ট্রেস ফেলে বলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া, শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ কমে যাওয়া ইত্যাদি জটিলতা দেখা দেয়। ফলের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। বুকে ব্যথা থেকে হার্ট অ্যাটাকে নিকট অতীতেই গায়ক কে কে মারা গিয়েছিলেন। এ কথাও আমাদের জানা। বুকের ব্যথা থাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

বুকে ব্যথা হওয়ার কারণ

বুকে ব্যথার কিছু কিছু কারণ সরাসরি হৃদরোগের ঝুকিকে নির্দেশ করে। কি সেসব কারণ? আসুন জেনে নেওয়া যাকঃ

  • মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনঃহার্টে রক্ত প্রবাহ বাধা গ্রস্থ করে।

  • মায়োকার্ডিইটিসঃ হৃদযন্ত্রের পেশিতে প্রদাহ হয।

  • পেরিকার্ডাইটিসঃহার্টের থলিতে প্রদাহ জনিত ব্যথা তীব্র।

  • করোনারি অ্যার্টারি ডিজিজঃ একে এনজাইনাও বলা হয়। হৃদপিন্ডের রক্তনালীর ব্লকেজের কারণে এমন হয়।

  • মাইট্রাল ভাল্ভ প্রল্যাপ্সঃ হৃদপিণ্ডে অবস্থিত মাইট্রাল ভালভ সঠিকভাবে বন্ধ হয় না।

  • এওর্টিক বিচ্ছেদঃ বিরল রোগ। মূলত হৃদপিন্ডের এওর্টা ছিড়ে গেলে হয়।

  • পালমোনারি এমবোলিজমঃ ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধে এই সমস্যা তৈরি হয়।

বুকে ব্যথা মানেই হৃদ রোগ নয়। প্রথমেই বলেছি, বুকে ব্যর্থতার একাধিক কারণ রয়েছে। আর চিকিৎসকরা দেখেছেন, বুকে ব্যথা মানেই হৃদরোগ নয়। এজন্য যখনই বুকে ব্যথা হয় তখন আপনার শরীরে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে একটি অনুমান করতে হবে। তারপর চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তার খোলাখুলি বলতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক হৃদরোগ বাধক যেসব কারণে বুকে ব্যথা হতে পারেঃ-

এসিডিটি হলেঃ প্রচুর তেল ও মসলা জাতীয় খাবার কিংবা ভাজা ভজি খাওয়ার পর সাধারণত এসিডিটি হয়ে থাকে। তখন বুকে প্রদা জনিত ব্যথা বা বুকে জ্বালা হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যথা সচরাচর কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বুকে জালা ও যদি ঢেঁকুর উঠে তাহলে এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ সেবন কর...

খাদ্যনালীর সমস্যাঃ অনেকের খাদ্যনালির মধ্যে কিছু সমস্যা থাকে। বিশেষত খাবার খাওয়ার সময় মিলতে অসুবিধা হয় এবং বুকে ব্যথা করে। এ ধরনের সমস্যায় নাইটোগ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ মুখে দিলে সুস্থ হওয়া যায়।

এফর্ট এনজাইনাঃ মূলত প্রচন্ড স্ট্রেস নিয়ে কাজ করার সময় অনেকে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তখন অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভাবেন হার্ট এটাক হবে কিনা। সচরাচরে এই সময় বিশ্রাম নিলে সুস্থ হওয়া যায়।

বুকের অন্যান্য সমস্যাঃ বুকে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। আপনার ফুসফুসের সংক্রমণ হলে বুকে ব্যথা হয়। বর্ষায় যখন ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বাড়তে শুরু করে তখন অনেকেরই বুকে ব্যথা হয়। এছাড়া বুকের মাংসপেশির বা পাজরের হাড়ের কোন সমস্যা, বুকে আঘাত পাওয়্‌ কোন ব্যথার ওষুধ খেলে বুকে ব্যথা হতে পারে।

বুকে ব্যথা হওয়ার লক্ষণ

বেস্ট বন্ড এলাকায় এক ধরনের চাপা অনুভূতি না সিনসিনে ব্যথা হয়। কিন্তু হাত বুলালে মনে হয় ব্যথাটা ঠিক ওখানে নয়।

  • বুকের ব্যথা প্রথমে হাত, তারপর চোয়াল এবং অবশেষে পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।

  • বুকের ব্যাথার পাশাপাশি মাথা ঘোরায়। ভীষণ দুর্বল লাগে তখন নিজেকে।

  • হার্ট রেট ও রক্তচাপ কমতে শুরু করে। অনেক সময় আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন না। আশেপাশের কাউকে ডেকে পরীক্ষা করে নিতে পার...
  • এক সময় কাশি বা জোরে শ্বাস নেওয়ার সময় ব্যাথাটা পিঠে চাপ দেয়।

  • মুখে টক স্বাদ চলে আসে।

  • প্রচন্ড ক্লান্তি কাজ করে মনে হয় না আর হাঁটার ক্ষমতা আছে।


কয়েকটি লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রয়েছে। যদি এসব লক্ষণের কোন একটি দেখতে পান দ্রুত হাসপাতালে চলে যান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে কি করবেন?

হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে তার লক্ষণ ও কারণ সনাক্ত করে সঠিক মেডিকেশন খুঁজে নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বুকে ব্যথা শুরু হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে একজন ব্যক্তি কি কি সতর্কতা অবলম্বন করবেন? কারণ বুকের ব্যথা হলে তার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপনি যেন একদম প্রথম থেকে এই ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে যেতে পারেন তাই আমরা বুকে ব্যথার কারণের খুঁটিনাটি উপস্থাপন করে প্রাথমিকভাবে কি করনীয় রয়েছেঃ

ডিসপিরিন জাতীয় ওষুধঃ যদি হৃৎপিণ্ড ে ব্যথা আপনাকে খুব একটা কাবু না করে তাহলে আপনি কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারেন। যদি ব্যথাটা হার্ট থেকেই হচ্ছে নিশ্চিত হন তাহলে ৩০০ মিলিগ্রাম এসপিরিন বা ডিস্পিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রেঃ আপনার যদি হার্টের কারণে বুকে ব্যথা ঘনঘন হয় তাহলে নাইট্রো গ্লিসারিন স্প্রে রাখুন। যদিও হৃদরোগীদেরই ঘন ঘন বুকে ব্যাথা হয় এমন নয়। কাজ করার সময় স্ট্রেস হরমোন নির্গত হওয়ার ফলে অনেক সময় বুকে ব্যথা হয়।

কোল্ড প্যাকঃ অনেক সময় বুকে টান পরলে মারাত্মক ব্যথা হয়। এই সময় আইস্প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। বুকের যেখানে ব্যথা হয়েছে সেখানে প্যাক দিয়ে চেক দিলে ব্যথা কমে আ...

শুয়ে থাকুনঃ বুকে ব্যাথা থেকে প্রচন্ড ক্লান্তি কাজ করছে এমন সময় বেশি নড়াচড়া না করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা নিরাপদ। অস্বস্তি বোধ হওয়ার আগ পর্যন্ত মাথা সামান্য উঁচু করে শুয়ে থাকুন। এ ক্ষেত্রে দুটো বালিশ মাথার নিচে দিন তবে খেয়াল রাখবেন ঘাড়ে যেন চাপ না পরে। এভাবে বুকের ব্যথা আস্তে আস্তে কমে আসবে।

পরিশেষে

বুকে ব্যাথা হলে যদি তা হার্ট থেকে হয়ে থাকে তাহলে হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসার জন্য যেতে হবে। হার্ট অ্যাটাক হলে মৃত্যুর ঝুঁকি যেমন আছে তেমনি সারা জীবন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। যদি হাসপাতালে গিয়ে নিজের রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যান তাহলে লাইভ স্টাইলে বদল আনতেই হবে। খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে,, ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, এবং অবশ্যই ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। এমন এক সময় আমরা রয়েছি যখন হৃদরোগের সংক্রমণে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। তাই বুকে ব্যাথা হলে অবহেলা করবেন ...





এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url