মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি ভ্রমন ও গাইড
মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি ভ্রমন ও গাইড
সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় মেঘের রাজ্য। সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব এক সৌন্দর্য সাজেক। বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের অন্তর্ভুক। ভূপৃষ্ঠ থেকে সাজেকের উচ্চতা ১৮০০ ফুট। সাজেকে তিনটি পাড়া রয়েছে। পাড়াগুলো যথাক্রমে রুই লুই পাড়া, হামারীপাড়, এবং কংলাক পাড়া।
সাজেকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে মেঘ। সাজেক যাওয়ার রাস্তাটা রোলার কোস্টারের থেকে কম কিছু নয়। হাজার হাজার ফুট উপরে পাহাড়ের মধ্যে এত সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।
ভূমিকা
হালের ক্রেজ সাজেক ভ্যালি। একই সাথে মেঘ পাহাড়ের মিতালি দেখার সুযোগ থাকায় ভ্রমণ প্রেমী মানুষদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাজেক ভেলির অবস্থান।
সাজেক ভ্যালি কথায় অবস্থিত
সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। আয়তনের দিক থেকে সাজেক চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। খাগড়াছড়ি সদর থেকে দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। দিঘীনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার। থেকে ৩৪ কিলোমিটার। সাজেক এর অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা খাগড়াছড়ি দিয়ে ভালো। রাঙ্গামাটি থেকে পানিপথে ট্রলার বা লঞ্চে আসতে হয়।
সাজেক যাবার উপযুক্ত সময়
বছরের যে কোন সময় আপনি সাজেক ঘুরতে যেতে পারেন। সাজেক একেক সিজনে একেক রূপ ধারণ করে। তবে যদি মেঘ দেখতে চান তবে জুলাই থেকে নভেম্বরের মাঝে যেতে হবে। তবে আমি দুইবার সাজেক গিয়েছিলাম নভেম্বর ও জানুয়ারি, জানুয়ারি মাসে মেঘ পায়নি। তবে আকাশের এত সুন্দর ভিউ পেয়েছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও এ যাতায়াত করতে হয় খাগড়াছড়ি দিয়ে। এই পথটাই বেশি সহজ।
ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি বাস আছে। ঢাকার যে কোন বাস স্টপেজ যেমন, কলাবাগা্ সায়দাবাদ, গাবতল্ কল্যাণপুর থেকে বাস খাগড়াছড়ি উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেয়। ৫২০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং এসি ভাড়া ৯০০ থেকে। খাগড়াছড়িতে পৌঁছাতে 7-8 ঘণ্টা সময় লাগে।
খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বর নামতে পারেন। সকালের নাস্তা এখানেই করে নিবেন। শাপলা চত্বর থেকে সিএনজি, চান্দের গাড়ি, জিৎ, মোটরবাইক রিজার্ভ করতে হবে। 12 জনের গ্রুপ হলে চান্দের গাড়ি, ১৪ থেকে ১৬ জনের গ্রুপ হলে জীপ, তিনজনের গ্রুপ হলে সিএনজ ভাড়া করতে পারবেন। তবে জিপে ১২ জনের বেশি মানুষ হলে পার পারসনের জন্য এক একটা টাকা দিতে হবে ড্রাইভারকে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়া-আসা ভাড়া(রাত্রিযাপন ছাড়া)
চান্দের গাড়ি -৫১০০ টাকা
মাহিন্দ্রা\ জিপ- ৫৪০০ টাকা
সিএনজি -৩০০০ টাকা
সাজেকে সেনাবাহিনীর এরকোর্ট কখন শুরু হয়
দীঘিনালা থেকে সকাল দশটা এবং বিকাল তিনটায় এসকোর্ট শুরু হয়। সাজেক থেকেও একই ভাবে সকাল দশটায় এবং বিকেল তিনটায় এসকর্ট শুরু হয়।এসকোর্ট ছাড়া একা সাজেক যাওয়া যায় না। মনে রাখবেন, বিকালের এসকোর্ট মিস হলে সেদিন আর সাজেক যেতে পারবেন না।
সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য
সাজেকের সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজের দারুন মিতালে চোখে পড়ে। এখানে তিনটি হেলিপ্যাড বিদ্যমান। যা থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। সাজেকে একটা ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হচ্ছে এখানে ২৪ ঘন্টায় প্রকৃতির তিনটা রুপি দেখা মিলে। কখনো খুবই গরম, একটু পরে হঠাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরে হয়তো চারিদিকে ঢেকে যায় মেঘের চাদর্ মনে হয় যেন একটা মেঘের উপত্যকা।
সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে টেকিং করে কংলাক পাহাড়ে যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলা কে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবন যাপ্ চারিদিকে মেঘের আনাগোনা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত আদিবাসীদের উৎসবের সময় তাদের সংস্কৃতির নানা উপকরণ পর্যটকরা উপভোগ করতে পারে।
সাজেক গিয়ে আর যা যা দেখবেন
খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্না,দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক,তৈদুছড়া ঝর্না,বিডিয়ার স্মৃতিসৌধ,মায়াবিনী লেক ও শান্তিপুর অরণ্য কুঠির।সাজের পাশাপাশি এসব জায়গাও ঘুরে দেখতে পারেন।
উপসংহার
প্রকিতির অপুরূপ সৌন্দর্য নিয়ে সৃষ্টি সাজেক ভ্যালি। যা পর্যটকদের আকর্ষন করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url