আনারস সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত
আনারস এক প্রকার গুচ্ছ ফল। এর অন্যান্য নাম -Pineapple,Anabus,Bahunetraphalam,Anamnasam। এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Ananas comosus(L)Merr.এই ফলের আদি জন্ম স্থান দক্ষিন আমেরিকা মহাদেশ।
হজমশক্তি বাড়ায় ঃ আনারস আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকারী। আনারসে রয়েছে ব্রমেলিন,যা আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বদহজম বা হজম জনিত যে কোন ।সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন আনারস খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। রক্ত জমাটে বাধা দেয়, দেহে রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয় এই ফল।
আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা:
আনারস সুস্বাদু মৌসুমি ফল। অনেকের কাসে এটি প্রিয়, আবার অনেকে এটি খেতে চান না। তবে আনারসের উপকারিতা জানলে হয়তো তারা সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে।অনেকেই মনে করেন,আনারস এবং কলা এক সঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হয়। এটা কুসংস্কার ছাড়া কিছুইনা।আনারস একটি অ্যাসিটিক এবং টক জাতীয় ফল।
দুধের মধ্যে যে কোন টক জাতীয় জিনিস দিলে দুধ ছানা হয়ে যায় বা ফেটে যেতে পারে। ফলে হতে পারে বদ হজম,পেত ফাপা বা পেত খারাপের মত সমস্যা। তবে এতে বিষক্রিয়ার কোন আশঙ্কা নেই।
আনারসের উপকারিতা:
পুষ্টির অভাব পূরণে আনারসের জুড়ি নেই। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন এ,সি,ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাস। এতে ব্রমেলিন নামক এনজাইম থাকে যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই হজম জনিত যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারশ খাওা যেতে পারে।
আনারসে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি প্রতিরোধেও ভুমিকা রাখে। জ্বর ও জন্ডিস প্রতিরোধেও আনারস বেশ উপকারি। নাক দিয়ে পানি পড়া,গলা ব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্পও ওষুধ হিসেবে আনারস কাজ করে। এই ফলে প্রচুর আঁশ থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ওদিকে এতে কোন ফ্যাট না থাকায় পরিমিত পরিমাণে আনারসের জুস পান করলেও ওজন কমে।
দেহে রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয় আনারস। ফলে শিরা- ধমনির মধ্যে দিয়ে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়। এতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। এ ছাড়া মাড়ির যেকোনো সমস্যা সমাধানে আনারস কার্যকারী।
চখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়া রোগ ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন' থেকে রক্ষা পেতে আনারস সাহায্য করে। এয়ে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এয় রোগ হওয়ার আশংখা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
আনারসে থাকা ক্যালরি আমাদের শক্তির জোগাড় দেয়। প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে কুচকে যাওয়া থেকে বাচায়। দেহের তৈলাক্ত তক, ব্রণসহ ত্বকের নানা সমস্যা আনারস যথেষ্ট কাজ করে। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামও থাকে। ক্যালসিয়াম হাড় ক্ষয় যাওয়া রোধে কাজ করে। এতে থাকা মাঙ্গানিজ হাড়কে করে তুলে মজবুত।
আনারসের অপকারিতা:
আনারস খেলে অনেকেই এলারজির সমস্যায় ভুগেন।ফলে তাদের শরীরে চুলকানি, ফুসকুড়ি দেখা দেয়।এতে থাকা চিনি ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। আনারস অ্যাসিটিক ফল। তাই খালি পেটে খেলে পেট ব্যাথা হতে পারে।
আনারস কোন ঋতুতে হয়:
ফল সংগ্রহ সাধারণত চারা রোপণের ১৫-১৬ মাস পর মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস গাছে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস পাকে।
আনারস কোন মাটিতে ভাল হয় :
উত্তরবঙ্গের অম্ল ও বেলে- দোয়াশ মাটি আনারস চাষের পক্ষে আদর্শ। এখানের নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুও আনারসের অনুকুল। তাই পশ্চিমবঙ্গে আনারসের চাষ প্রধানত হোয় উত্তরেই। তবে দক্ষিনবঙ্গের ২৪ পরগনা ও হুগলী জেলাতেও আনারস চাষ হয়।
বারান্দার টবেই জন্মাবে শৌখিন আনারস :
টবে আনারস চাষ,এটাও কি সম্ভব?অবশ্যই সম্ভব।না,এর জন্য মোটেও আপনাকে নার্সারিতে ছুটতে হবে না কিংবা চারা কেনার জন্য অস্থির হতে হবে না। এসব কোন ঝামেলা ছারায় গাচ হে আনারস ফলিয়ে ফেলতে পারবেন আপনে, ভীষণ সহজ একটা উপায়ে। আনারস খেয়ে পাতাটা আমরা ফেলেই দি তাইনা?আপ্নি ই জানেন এই ফেলা পাতা থেকেই লাগিয়ে ফেলতে পারবেন নতুন আনারস গাছ। এমনকি সেই আনারস গাছে ধরবে নতুন আরেকটি আনারস!তেমন কোন যত্ন ছাড়ায় আনারসের ফেলা পাতা থেকে আনারস গাছ বোনা যায়। ফল ধরার পাশাপাশি ঘর সাজাতেও ব্যবহার করতে পারবেন আনারস গাছ।আসুন জেনে নেয়া যাক পদ্ধতিঃ
-প্রথমে ১টি আনারস থেকে ১ ইঞ্চি পরিমাণ আনারস সহ মাথার পাতা কেটে আলাদা করে রাখুন।
-এই কাটা অংশটি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।মাঝে মাঝে পানি বদলে দিন। সপ্তাহ দুয়েক পর দেখবেন কাটা অংশ থেকে শিখরের মত বের হইছে।
-এবার একটি টবে গোবর সার ও মাটি মিশিয়ে নিন।
-মাটিতে সামান্য গর্ত করুন।
-আনারসের পাতার সঙ্গে থাকা ফল টুকু ঢুকিয়ে মাটি দিয়ে ভাল করে ঢেকে দিন।
-এবার আর কোন যত্ন ন্মা করলেও চলবে। আনারস গাছের জন্য তেমন কোন খাটুনী করতে হয়না।দুদিন পর পর টবে পানি দিলেই ভাল থাকবে।
-আনারস গাছ বেশ ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায়। একটি আনারস গাছে ফল ধ্রতে প্রায় দুই তিন বছর সময় লাগে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url