বৃষ্টির পানি উপকারিতা ও অপকারিতা

ঘরে বসে কিভাবে পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায় বিশুদ্ধ ও পান যোগ্য প্রাণী হিসেবে যেসব উৎসব বিবেচনা করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো বৃষ্টির পানি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, এই বৃষ্টির পানিও আর পান করার জন্য নিরাপদ নাই। সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণা সাপেক্ষে এ মন্তব্য করেছেন।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীর সব প্রান্তে বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিকর পিএফএএস নামক রাসায়নিক পাওয়া যাচ্ছে। আর এর রাসায়নিক এর মাত্রা এমন মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে যা আর পানির জন্য নিরাপদ নয়। কারণ এই রাসায়নিক পদার্থ সহজে নষ্ট হয় না। প্যাকেজিং, শ্যাম্পু এবং মেকআপে প্রাথমিকভাবে এর রাসায়নিক পাওয়া গেছিল। এসব উপাদান থেকে এর রাসায়নিক পানি ও বাতাসে ছড়িয়েছে।

বৃষ্টির পানিতে আছে অ্যালকাইন উপাদান যা এসিডিটি কমায় ও হজম শক্তি বাড়ায়। এতে থাকা অ্যালকাইন পিএইচ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রুখে দেয়। এই পানি এন্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে, যা ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। প্রতিদিন সকালে সংরক্ষণ করে রাখা বৃষ্টির পানি ২-৩ তিন চামচ খেলে পাকস্থলীর সমস্যা দূর হয়। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে থাকে ভিটামিন বি১২। ভ অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে থাকে ভিটামিন বি।

বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসার বড় কারণ হলো ভেজা কাপড় গায়ে শুকিয়ে যাওয়া। কারণ, বৃষ্টির পানিতে প্রতিদিন ভেজা হয় না বলে শরীর অভ্যস্ত থাকে না। তাছাড়া বৃষ্টির পানি কিছুটা ঠান্ডা। প্রতিদিনের গোসলের পানির সঙ্গে এর ভিন্নতা রয়েছে যার ফলে গায়ে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পড়লে শরীরের তাপমাত্রা বড় পরিবর্তন আসে যেটা অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে নার্ভাস সিস্টেম এর কাছে একটি ইলেকট্রিক শখ এর মত লাগে। ফলে উত্তেজনায় শরীরের ছোট ছোট শিরা গুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা কমানো বা বের করে দেওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। শরীরের ভেতর তাপমাত্রা আটকে থেকে তার বহিঃপ্রকাশ জ্বরের মাধ্যমে প্রকাশ ঘটায়। ফলে হঠাৎ ভিজলে জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।

বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে বড়দের বকুনি শুনতে হয় অনেককেই। তবে ঝুম বৃষ্টিতে কিছুটা সময় ভিজতে সকলেরই ইচ্ছা করে। বর্ষা মানে হাচি, কাশি, সর্দি এবং জ্বর। এটাই প্রচলিত ধারণা আমাদের। কিন্তু বর্ষায় হয়ে উঠতে পারে রোগ মুক্তির ঋতু। অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণা রিপোর্টের দাবি, বৃষ্টির পানি পান করা সবচেয়ে নিরাপদ। মাটি অথবা পাথরে থাকা মিনারেলস আর বজ্র বৃষ্টির পানিতে থাকে না। সে কারণে বৃষ্টির পানি পানি অগাধ উপকারিতা দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

এছাড়া বৃষ্টির সময় পরিবেশে যে ঘ্রান ছড়িয়ে পড়ে তাকে বলা হয় পেট্রিকোর। এটি এক ধরনের হরমোন যা মানুষকে আরো চন মনে করে তুলতে সহায়তা করে। বৃষ্টির অনেক উপকারিতা থাকলেও ১০ থেকে ১২ মিনিটের বেশি সময় বৃষ্টিতে ভেজা উচিত নয়। এতে ঠান্ডা জ্বর লেগে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে চুলের ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। বৃষ্টির পানিতে প্রাকৃতিক অ্যালকাইন থাকে, যা চুলের গোড়া থেকে ময়লা ও খুশকি পরিষ্কার করে। নিয়মিত বৃষ্টির পানিতে গোসল রুক্ষ চুলকে স্বাস্থ্যজ্জল করে, যার ফলে চুল চকচকে দেখায়। তবে বৃষ্টিতে ভেজার পর আবার ভালোমতো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

বৃষ্টির পানির কিছু অসুবিধা রয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে কাদা ঢোস হতে পারে যা সম্পত্তি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে। যখন বৃষ্টি থেকে বন্যা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয় এবং ব্যয়বহুল পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হয়। উপরন্ত দূষণ বৃষ্টিকে এসিড বৃষ্টিতে পরিণত করতে পারে যা পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। এসিড বৃষ্টি গাছ, স্বাদু পানি এবং মাটিতে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে, কীটপতঙ্গ এবং জলজ জীবন-জীবিকা ধ্বংস করে, রংয়ের খোসা ছাড়ে, সেতুর মতো ইস্পাত কাঠামোর ক্ষয় এবং পাথরের বিল্ডিং ও ভাস্কর্যের ওপর প্রভাব ফেলে। সেই সাথে মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

আয়ুর্বেদ ছাড়তে বৃষ্টির পানি নিয়ে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে তা শুনলে অবাক না হয়ে পারবেন না। কারণ, বৃষ্টির পানিকে সেখানে তুলনা করা হয়েছে মধুর সঙ্গে। সেখানে আরো বলা হয়েছে, এই পানিতেই লুকিয়ে আছে সব অসুখের ওষুধ। এছাড়া সুস্থ থাকার টনিক হিসেবে বৃষ্টির পানি দারুন উপকারি। সুতরাং বলা যায় বৃষ্টির পানি একদিকে যেমন মানুষের জীবনকে বিসর্জন করে তুলেছে ঠিক অপরদিকে বৃষ্টির পানিতে রয়েছে হাজার রকমের সুবিধা। যার সবগুলোই মানব জীবনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।