ডায়াবেটিস রোগেআক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য তালিকা
টিভিতে ওয়াইফাই সংযোগ করা বদলে যাওয়া লাইফ স্টাইলের কারণে আমাদের জীবনে অন্য জটিলতার পাশাপাশি ব্যাপক হারে ডায়াবেটিস বেড়েই যাচ্ছে। একে আয়তকে রাখার জন্য প্রথমে ভাবতে হবে খাবারের কথা। কারণ পথ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
নিয়ন্ত্রিত খাবারের মধ্যেই প্রথমে আসে মিষ্টি খাবার। যেমন-চিনি, গুড়া, মধু,গ্লুকোজ ইত্ত্যাদি। এছাড়া আমিষ বা প্রোটিন এবং ছবি বা ফ্যাট স্বাভাবিক মাত্রায় গ্রহণ করা। সকালের নাস্তার সময় থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পূর্ব পর্যন্ত প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা পর পর খাবার খেতে হবে। ওষুধ ও খাবারের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকতে হবে।
- বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে
- ডায়াবেটিসের কারণে প্রতিবছর 10 লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়
- যে কোন ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন
- শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে( গ্লুকোজে) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এই জটিল করার কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হতে পারে
- ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি এবং অনেক সময় শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটেও ফেলতে হতে পারে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট
ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ হলো অনিয়মিত খাবার, মানসিক চাপ, ব্যায়ামের অভাব। ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের রয়েছেঃ-
টাইপ-১
- এটি মূলত কিশোরী প্রসূতি ডায়াবেটিস নামে পরিচিত
- এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীরে কম বা কোন রকম ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। এটি প্রায়শ্চী শৈশবে বা মাছ বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে ঘটে এবং এটি বংশগত রোগ হতে পারে
- এই ধরনের ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন ইনসুলিন এর ইনজেকশন নিতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য তাদের ইন্সুলিনের সাথে খাবার ও কাজ কর্মের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়
টাইপ-২
- এই ধরনের ডায়াবেটিস মূলত প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের মধ্যে দেখা যায়। প্রায় ৮0 শতাংশ মানুষের মধ্যে এই টাইপ-২ ডায়াবেটিস দেখা যায়
- এখানে, যদিও প্যানক্রিয়া যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করে, শরীরের কোষ এই প্রক্রিয়ার সংবেদনশীল হয়
- টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সাথে লড়াই করার সেরা উপায় হল ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা
- কখনো কখনো মৌখিক ওষুধ বা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন এর ও প্রয়োজন হয়
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ
- চরম তৃষ্ণা ও ক্ষুদা লাগা
- ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করা
- ত্বক শুকনো হয়ে যাওয়া
- শরীরের ওজন কমে যাওয়া
- ক্লান্তি বা তন্দ্রা অনুভব করা
ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য তালিকা
প্রতিটা ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা পৃথক হবে। বয়স, ওজন ও উচ্চতা, কাজের ধরন, কায়িক পরিশ্র্ম, জীবন যাপন পদ্ধতি, আর্থিক অবস্থা সবকিছু বিবেচনায় এনে এ তালিকা করা হলো। ডায়াবেটিস হলে সব খাওয়া নিষেধ তা নয়। তবে খাদ্যে বাছাইয়ে সতর্ক ও সুশৃংখল হতে হবে। পুনরাবৃত্তি ও বিরক্তি ঠেকাতে প্রতিদিন একই ধরনের খাবার না খেয়ে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করতে হবে। অন্যান্য সাধারন মানুষের মতো একজন ডায়াবেটিস রোগী সবকটি খাদ্য উপাদান মানে শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন ইত্যাদি গ্রহণ করবেন।
ডায়াবেটিস ধরা পড়লে প্রথমে যা করা দরকার তা হলো সাদা চিনিযুক্ত সব খাবার বর্জন করতে হবে। চিনি বা হরকরা অন্যান্য খাবারেও আছে তাই সরাসরি চিনি বাদ দিলে ক্ষতি নেই। শর্করা খাবার হলো ভাত, রুটী, নুডুলস ইত্যাদি। এসব সীমিত পরিমাণে খেতে হবে এবং সাদা চাল ও আটা বা ময়দার পরিবর্তে লালসাল ও আটা খাওয়া ভালো।
এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই কম। খাবারের শর্করা বিশেষণের হ্রাস বৃদ্ধির পরিমাণ হলো এই জিআই। এর সূচক ১ থেকে ১০০। যেসব খাবার উৎস জিয়াইযুক্ত সেগুলো দ্রুত রক্তে শোষিত হয় ও রক্তের শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে যেসব খাবারের নিম্ন জি আই সেগুলো ধীরে ধীরে শোষিত হয় বলে শর্করা দ্রুত বাড়তে পারে না।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় যা যা থাকতে হবে
একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য পাঁচটি প্রধান দুব্বা পদের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এসব হচ্ছে-
- ফলমূল ও শাকসবজি
- স্বেচ্ছার সমৃদ্ধ খাবার। যেমনঃ লাল বা বাদামি চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা পাউরুটি
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। যেমনঃ ডিম, মাছ, মাংস, সিম ও অন্যান্য বীজ, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার। যেমনঃ দই, ছানা ও পনির
- বিভিন্ন ধরনের তেল, মাখন এবং ঘি
আপনার দৈনিক কতটুকু খাবার ও পানীয় প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক পরিশ্রম এবং আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কি ধরনের লক্ষণ নির্ধারণ করেছেন তার ওপর। সুষম খাদ্য অভ্যাস এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট কিছু খাবার বেশি পরিমাণে এবং অন্যান্য খাবারগুলো কম পরিমাণে খাওয়া। আবার, কেবল এক ধরনের খাবার দেহের সব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাসের মূল হলো বৈচিত্র। এই বৈচিত্র আনা যায় প্রতিদিন মূল পাঁচটি গ্রুপের প্রত্যেকটি থেকে ভিন্ন খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে।
ডায়াবেটিসেও খেতে পারেন যে সাথে ফল ৭টি ফল
ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ফলাহার ভীতি কাজ করে। বেশিরভাগ ফলে মিষ্টি উপাদান বেশি তাই অনেক ডায়াবেটিস রোগীর ফল খেতে ভয় পান। কিছু ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকার বয়ে আনে। তা হল-
- আপেল
- অ্যাভোকেডো
- পেঁপে
- বেরি জাতীয় ফল
- কামরাঙ্গা
- কমলা
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় সবজি
রঙ্গিন সবজি যেমনঃ লাল, হলুদ, কমলা ইত্যাদি বর্ণের সবজিতে লাইকোপেন, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন এ ইত্যাদি থাকায় সুগার রোগীর হার্ট,ত্বক ও চোখ ভালো থাকে। এছাড়া সবুজ শাকসবজি টেটুস পাতা, পালং শাক, ঢের্স, ব্রকলি, বাঁধাক্পি, মটরশুঁটি ইত্যাদি সবজিতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
শেষ কথা
বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস একটি সাধারন রোগ হয়ে গেছে। প্রাপ্ত বয়স থেকে মধ্য বয়সের সকলেরই এখন কম বেশি ডায়াবেটিস হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে ভয় না পেয়ে শরীর এবং স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়ে সুষম খাদ্য এবং মৌখিক ওষুধ খেয়ে রোগকে কন্ট্রোল রাখতে হবে।
যদি আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে জানান এবং আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url