ছাদ বাগানের- গাছের রোগ বালাই ও প্রতিরোধ
ছাদ বাগান-ছাদ বাগান করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপছাদ বাগান ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাত বাগানে ফুলের মাঝে এখন বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে সবজি এবং ফল গাছ। তাই ছাদ বাগান এখন পারিবারিক পুষ্টি নিরাপত্তা ঘুমটা রাখছে।
ছাদ বাগান এ মাঠ ফসলের সে তুলনামূলক রোগ ও পোকার আক্রমণ কম। তবে কিছু পোকা যা একাধিক প্রজাতির ক্ষতি করতে পারে, এদের উপস্থিতি ছাদ বাগানে লক্ষ্য করা যায়। ছদ বাগানের এ সকল রোগ বালাই দমন করা কিন্তু মোটেও কঠিন নয়। প্রথমেই প্রয়োজন শত্রু নিশ্চিত করা অর্থাৎ আক্রমণকারী প্রকাশ চিহ্নিত করা। চলুন জেনে নেওয়া যাক এসব পোকা সম্পর্কে-
ছাতরা পোকা বা মিলি রোগ
পেঁপে, পেয়ারা,কুল,লেবু,আম,করমচা,জল্পাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ প্রকার আক্রমণ দেখা যায়। পাতার নিচে সাদা তুলার মত দেখা যায়। পোকা উড়তে পারেনা, টিপ দিলে হলুদ পানির মত বের হয়ে আসে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায় এবং পাতা ঝরে পড়ে, ফলের আকার বিকৃতি হয়ে যায় অনেক সময় পাতায় গুটি মোল্ড রোগের আক্রমণ হয়।
জ্যাসিড পোকা
পূর্ণবয়স্ক ও বাদশা উভয়ই ক্ষতি করে। চারা গাছ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত এরা পাতার রস খায় এবং পাত্তার আকার বিবর্ণ করে তোলে। পাতা হলদে তামা রং হয় এবং পরে শুকিয়ে যায়।
সাদা মাছি পোকা
এই পোকা পাতার রস চুষে খায় যার ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। পাতায় অসংখ্য সাদা সাদা পাঠাযুক্ত মাছি দেখা যায়। তবে গাছে নাড়া দিলে পোকা উড়ে যায়।
জাব পোকা
জাব পোকা অতি ছোট, নরম দেহ ও উজ্জ্বল কালো রঙের। এরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। এই প্রকার পাকা বিহীন তাই উড়তে পারেনা কিন্তু পূর্ণাঙ্গ পাখাওয়ালা যাব পোকা উড়তে পারে। পূর্ণাঙ্গ ও ছোট এই যাব পোকা পাতা, ফুল, কচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়। অধিক আক্রমণে গাছের বাড়তি কমে যায় ও ফলন কম হয়। এ পোকা ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
মাকর পোকা
পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা মাকরপোকা একটি শাখার কচি পাতায় আক্রমণ করে ও পাতার রস আসে নাই। পাতা ভেতরের দিকে কুঁকড়িয়ে যায় যার ফলে দেখতে উল্টো নৌকার মতো দেখায়।
মাছি পোকা
শসা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, লাউ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করলা, এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। লাল সে বাদামী মাছির ঘাড়ে হলুদ দাগ যুক্ত রেখা আছে এবং পাখা স্বচ্ছ। পাখার নিচের দিকে কিনারায় কালো দাগ আছে। পেট মোটা, ইস্ত্রি মাছের পেছনে শুরু ও চোকা ডিম পাড়ার মতো নল আছে। স্ত্রী মাছি কচি ফলের নিচের দিকে অভিপোজিটর ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার স্থান থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে । যা শুকিয়ে বাদামে রং ধারণ করে।
কাণ্ড ও শিকড় পচা
মারাত্মক ক্ষতি করার আগে আগে এই রোগটি সহজেই নির্ণয় করা যায় না। প্রথমদিকে, আক্রান্ত গাছের পাতায় ব্লাইড বা ধসা রোগের মত দাগ পরিলক্ষিত হয়। কেননা নিচের দিকে পাতা এর স্পট নজরে আসে। তবে গাছের ডাল পালাতেও দাগ দেখা যাবে। একই সময়ে রোগটি শিকড়েও ছড়িয়ে দিতে পারে যার ফলে উদ্ভিদকে পুষ্টি গ্রহণে বাধা দেয়। আপনার মাটি ভালো হবে শুকিয়ে যাওয়া, ছত্রাক নাশক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলোর একটি মাটি ভরাট করায় এবং সংক্রামিত উদ্ভিদ উপাদানগুলি সরিয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সুনিষ্কাসন সুবিধা সম্পন্ন মাটি, ছত্রাক নাশক ট্রাইকোডার্মা দিয়ে মাটি শোধন এবং সংক্রমিত উদ্ভিদ সমূলে ধ্বংস করাই শ্রেয়।
ছাদ বাগানের গাছের রোগ বালাই প্রতিরোধ
পোকা দমনঃ
- সাদা ( থ্রিপ্সের জন্ন্য) ও হলুদ ( এফিড,জ্যাসিড,সাদা মাছির জন্ন্য) আঠা যুক্ত বোর্ড স্থাপন করা
- ৫০ গ্রাম সাবানের গুড়া ১০ লিটার পানিতে গুলে পাতার নিচে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ভালো করে স্প্রে করা। সাথে পাস কৌটা গুল ( তামাক গুঁড়া ) পানিতে মিশিয়ে দিলে ফল ভালো পাওয়া যায়
- সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসাবে থ্রিপ্স,এফিড,জ্যাসিড,সাদা মাছি ও মিলি বাগ দমনে অনুমোদিত ব্যবহার করা। যেমন-এড মায়ার ০.৫ মিলি বা ০.২৫ মিলি ফ ইমিটাফ বা ২ মিলি টাফগর/রগব/সাঙ্গর প্রতি লিটার পানিতে মিশে স্প্রে করা
ছাদ বাগানের পরিচর্যা পদ্ধতি
বর্তমানে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদেই বিভিন্ন ধরনের বাগান রয়েছে। তবে এসব বাগানের অধিকাংশ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিত উদ্বেগ নেওয়া হলে বাড়ির ছাদে ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদন করা যায়। কোন গাছের জন্য কি ধরনের মাটি উপযোগী তার নিশ্চিত হয়ে ছাদে বাগান করলে ভালো হয়।
এছাড়া মাটির ধরন জেনে বাগান করলে ছাদে যে কোন ধরনের গাছ জন্মানো সম্ভব। ৪ থেকে ৫ কাঠা জমির উপর নির্মিত বাড়ির ছাদে পরিকল্পিতভাবে বাগান করলে পরিবারের চাহিদা পূরণ করেও বছরে বিক্রি করা যায় 40 থেকে 45 হাজার টাকা। বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে এই ছাদে বাগান যা পরিবারকে করবে সচ্ছল। ছাদে বাগান দুভাবে করা যায়। যেমন-কাঠ বা লোহার ফ্রেম এটে বেড তৈরি করে এবং অন্যটি হল টব, ড্রাম, পট, কন্টেইনার এসব ব্যবহার করে।
প্রথমত, পুরো ছাদ বা ছাদের অংশবিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্নিশের পার্শ্বে বা আলাদা প্রেম করে সুন্দরভাবে ডিজাইন করে সেটিং করা যায়। এক্ষেত্রে জল ছাদ থাকতে হবে। জল ছাদ না থাকলে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে তার ওপর মোটা পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর মাটি দিতে হবে। মাটির গুরুত্ব বেশি হতে হবে।
এমন ভাবে মাটি দিতে হবে অন্তত দু ফুট পুরো মাটির স্তর থাকতে হবে। তবে যত বেশি হবে তত ভালো। অতিরিক্ত পানি, সার, পাব আবার সুষ্ঠু ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে পরিমাণ মতো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। সঠিক নিয়মে এবং পরিকল্পিতভাবে ছাদ বাগানে চাষাবাদ করলে ভালো সুফল পাওয়া যায় যা পরিবারের চাহিদা পূরণ করেও বাড়তি কিছু আয় করা সম্ভব। যা পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করে তুলবে।
ছাদে বাগানের কিছু জরুরী টিপস
- লম্বা গাছকে পিছনে ও ছোট গাছকে সামনে রাখতে হবে
- টবে বা ফ্রেমে খৈল দেওয়া যাবে না, এতে পিপড়ার উপদ্রব বাড়তে পারে
- বাজার থেকে কেনা প্যাকেট জাত কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ভালো হয়
- বছরে একবার নতুন মাটি দিয়ে পুরনো মাটি বদলে দিতে হবে। এটি অক্টোবর মাসে করা ভালো।
- ছাদের বাগানের জন্য মিশ্র সার, গুটি ইউরিয়া, খৈল, হাড়ের গুড়া ব্যবহার করা ভালো
- অবস্থা বুঝে গাছের গোড়ায় চুনের পানি সপ্তাহে ১ ব্যবহার করা যায়
লেখক এর মতে
সকাল বিকেল গাছে পানি দিতে হবে কিন্তু গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লম্বা গাছকে ছোট গাছের সামনে রাখতে হবে। টবে বা ফ্রেমে খৈল দেওয়া যাবে না, এতে পিঁপড়ার উপদ্রব বাড়তে পারে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না করা গেলে এবং রোগের চিকিৎসা না করা পেলে যে কোন সময় আপনার বাগানের ফসলের নির্ধারণ ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সুতরাং ছাদ বাগানের দিকে পর্যাপ্ত যত্ন ও নজর দিতে হবে। যেহেতু বর্তমান সময়ে ছাদ বাগানের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই ছাদ বাগানকে আকর্ষণীয় ও রোগবালার মুক্ত করতে সার্বক্ষণিক নজরে রাখতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url