হাস পালনের পদ্ধতি-যেভাবে অধিক লাভবান হওয়া যায়

নদী নালা, খাল বিল, হাওর বাওর ও অজস্র পুকুর আর জলাশয় সমৃদ্ধ আমাদের এই বাংলাদেশ। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় নিম্নে অঞ্চলে অর্থাৎ যেখানে নদী নালা, খাল বিল বেশি পরিমাণে আছে সেসব এলাকায় মানুষ কম পুজিতে হাঁস পালন করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
হাস পালনের পদ্ধতি-যেভাবে অধিক লাভবান হওয়া যায়
আজকাল আমাদের দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য হাঁস পালন জীবিকার অন্যতম উপায়। আমাদের দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেমনভাবে হাঁসের খামার গড়ে না উঠলেও গ্রামের কৃষকেরা প্রচলিত পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে থাকেন।

হাঁস পালনে কোন পদ্ধতির অবলম্বন করা ভালো?

সাধারণত হাঁস পালনে নিম্নের পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করা হয়ে থাকে। যদি কোন কৃষক বা খামারি নিম্নে পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে হাস পালন করে তাহলে অধিক পরিমাণে লাভবান হওয়া সম্ভব না থাকে। সেগুলি হল-


  • উন্মুক্ত পদ্ধতি(Open Method)
  • অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতি(Semi- Intensive Method)
  • আবদ্ধ পদ্ধতি(Intensive Method)
  • লেন্টিং পদ্ধতি(Lenting Method)

উন্মুক্ত পদ্ধতির সুবিধা সমূহ-
  • এ পদ্ধতিতে হাঁস পালনের খাদ্য খরচ কম হয়
  • বাসস্থানের জন্য খরচ কম হয়
  • ব্যবস্থাপনায় কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়
  • মুক্ত আলো বাতাসে চলাচল করতে পারে বিধায় আবদ্ধ পদ্ধতি তুলনায় এ পদ্ধতিতে হাসির বৃদ্ধি ভালো হয়

উন্মুক্ত পদ্ধতির অসুবিধা সমূহ-

  • ঘাস গুলোকে বিভিন্ন শিকারী প্রাণী খেয়ে ফেলতে পারে
  • খারাপ আবহাওয়া হাসির ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে
  • সব সময় পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে
  • মুক্ত জায়গায় ডিম পারলে ডিমের সংখ্যা কম হতে পারে

অর্ধ- আবদ্ধ পদ্ধতির সুবিধা সমূহ-

  • বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁস পালন করার সুবিধা জনক
  • হাসের যত্ন নেওয়া সহজ
  • শিকারী প্রাণীর কোন ভয় থাকেনা
  • খাদ্য গ্রহণ সমভাবে হয়।
  • স্বাস্থ্যকর পরিবেশ প্রদান করা হয়
অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতির অসুবিধা সমূহ-

  • বেশি পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হয়
  • যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ খরচ বেশি হয়
  • মুক্তভাবে চলাচলের সীমাবদ্ধতা থাকে

লেন্টিং পদ্ধতির সুবিধা সমূহ-

  • এই পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়
  • খাবার খরচ কম লাগে
  • বাসস্থান নির্মাণ বাবদ খরচ কম হয়

লেন্টিং পদ্ধতির অসুবিধা সমূহ-

  • এই পদ্ধতিতে বাচ্চা হাঁস পালন করা যায় না
  • কিছু অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হয়
  • হাঁস হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে

হাঁসের বাসস্থান কেমন হবে?

জায়গা নির্বাচন: হাসির ঘরের জন্য সাধারণত খোলা, উঁচু ও রৌদ্র থাকে এমন জায়গা বাছাই করা উচিত। বালু, মাটি, ড্রেন কাটার সুবিধা আছে এবং ঘাস জন্মাতে পারেনা এমন জায়গা নির্বাচন করা উত্তম। ঘরের সঙ্গে বড় গাছ বা জঙ্গল থাকা উচিত নয়। মুরগির খামারের কাছে হাসির ঘরের জায়গা নির্বাচন করা ঠিক নয়।

বাংলাদেশে হাঁস পালনের জন্য কোন কোন পদ্ধতি বেশি লাভজনক

বাংলাদেশে হাঁস পালনের জন্য কয়েকটি পদ্ধতি আছে, কিন্তু লাভ জনকতা সম্পর্কে কথা বলার আগে আমাকে বলতে হবে আপনি কি ধরনের হাঁস পালন করতে আগ্রহী এবং কি ধরনের সম্পদের উৎপাদনে আগ্রহি। হাঁস পালনের জন্য কিছু প্রধান পদ্ধতির মধ্যে বিবেচনা করা যেতে পারেঃ-

খাদ্য হাঁস পালনঃ এই পদ্ধতিতে হাঁসগুলি প্রধানত খাদ্যজনিত প্রক্রিয়ায় জন্মানো হয়। এই পদ্ধতিতে স্বাভাবিক পরিবেশে হাঁসগুলি ও মাছ ধরে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। খাদ্য হাঁস পালন মানেই খাদ্যজনিত উৎপাদনের মাধ্যমে হাঁস পালন করা। এই পদ্ধতি মূলত খাদ্য ও মাসের জন্য উপযোগী।

মাছ ও পানি পোকা উৎপাদনের সাথে সমন্বিত হাঁস পালনঃ- এই পদ্ধতিতে হাঁসগুলি মাছ ও পানি পোকা উৎপাদনের সাথে সমন্বিত ভাবে পালন করা হয়। হাঁসগুলি ঘাস, শাক-সবজি ফসল বাগানে স্থাপিত পানি পোকা খাবার এবং মাছের খাবার ব্যবহার করে পালন করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাছ ও পানি পোকা উৎপাদন করা হয় যা আরো আয়ের উৎপাদনে সাহায্য করে।

উচ্চমাত্রা বাছাইকৃত হাঁস পালনঃ- এই পদ্ধতিতে উচ্চমানের হাঁসগুলি পালন করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রাকৃতিক গুনাবলীতে বাছাইকৃত হাস পালন করা হয়, যা বিপুলসংখ্যক প্রাকৃতিক পদার্থ ও কম বাস্তগত খরচ ব্যবহার করে পালন করা হয়। এই পদ্ধতিতে উচ্চ মানের উৎপাদন হাসিল করা যায়।

হাঁস বছরে কতটি ডিম দেয়?

হাঁসের মধ্যে দেশি হাঁস ডিম ও মাংস মাংস উৎপাদন করে থাকে। এরা প্রায় বছরের 70 থেকে 80 টি ডিম দেয়। কিন্তু উন্নত ব্যবস্থাপনায় এগুলো(দেশি সাদা ও দেশি কালো) হাঁস বছরে প্রায় ২০০-২৫০ টি ডিম দিতে সক্ষম হয়। খাকি ক্যাম্বেল হলো ডিম উৎপাদনের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ। বছরে এ ধরনের একটি হাঁস গড়ে ২৫০-৩০০ টি ডিম দিতে পারে।

বাংলাদেশে কত প্রজাতির হাঁস আছে

বিশ্বে যে 176 প্রজাতির হাঁস-রাজহাঁস রয়েছে তার কম বেশি ২৬ টি আছে এ বাংলাদেশ। তাছাড়া আবাসিক আছে আরো চারটি।

বাড়তি আইয়ের আশায় অন্যান্য কাজের পাশাপাশি হাঁস পালন একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। হাঁস পালন করে অর্থনৈতিকভাবে যেমন লাভবান হওয়া যায় তেমনি পাশাপাশি পরিবারের চাহিদাও পূরণ করা যায়। বর্তমান সময় হাঁস চাষ পদ্ধতি গুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে হাঁস পালন শুধু একক চাষ না করে অনেকে যৌথভাবে হাঁস চাষ করে বাড়িতে আয় করছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url