গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসের সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে এর পরের মাসগুলোতে স্বাভাবিক তুলনায় বেশি খাবার খেতে হয়। এ ক্ষেত্রে একটি সুসম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ।
গর্ভকালীন সময়ে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভকালীন বাড়তি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। গর্ভের শিশুর জন্য উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে একটি সুসং খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভ অবস্থায় মায়েদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় যেসব খাবার রাখা উচিত
- শর্করা জাতীয় খাবার। যেমনঃ ভাত ও রুটি
- গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাকসবজি
- ওর রঙিন ফল ও সবজি
- ডিম
- দুধ জাতীয় খাবার
- মাছ মাংস ও ডাল
উপর একটি প্রতিটি খাবারের মধ্যে রয়েছে সুষম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ বৈশিষ্ট্য। যা গর্ভাবস্থায় শিশুর দৈহিক ও বুদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়া নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ থেকে শিশুকে রক্ষা করে। শুধু শিশুই নয় গর্ভাবস্থায় মায়েদেরও এসব সুষম খাবার শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় যেসব ফল খাওয়া উপকারী ও ক্ষতিকর
গর্ভাবস্থায় শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে ফল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। তবে ফল খেতে হবে বুঝে শুনে। কেননা সব ফল এই সময় খাওয়া নিরাপদ নয়। স্বাস্থ্য বিষয়ক একটু ওয়েবসাইট প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে গর্ভাবস্থায় কোন ফল খাওয়া যাবে? ও যাবে না সে সম্পর্কে জানানো হলো-
গর্ভাবস্থায় যেসব ফল খাওয়া যাবে
কলাঃ গর্ভাবস্থার খাদ্য তালিকায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কলা। এটা উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং এই সময়ের প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা পূরণ করে। কলা নারীদের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এতে রয়েছে হিমোগ্লোবিন যা রক্তস্বল্পতার মাত্রা কমায়।
এলার্জি বা ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে কলা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
আপেলঃ সারা বছরই পাওয়া যায় আপেল। এটা আঁশ, পটাশিয়াম ও লৌহ সমৃদ্ধ যার শরীরে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। আপেল কুচি ও কলা একসঙ্গে মিশিয়ে মজাদার ফলের তৈরি করতে পারেন। যা শরীরের জন্য খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার।
কমলাঃ কমলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যা গর্ভবতীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। এটা স্বাস্থ্য উপকারী চর্বি ও ফোলায়েট সমীদ্ধ ফল যা ভ্রুনের মস্তিষ্কের সুস্থ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তরমুজঃ তরমুজ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ পানীয় ফল। এটা শরীর থেকে দূষিত উপাদান দূর করে ও শরীর আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তরমুজ ইলেক্ট্রো লাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে তরমুজ অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত তরমুজ খেলে পেট ফোলা ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
গর্ব অবস্থায় যেসব ফল খাওয়া যাবেনা
পেঁপেঃ আধা কাঁচা পেপে রয়েছে লেটেক্স যা গর্ভপাতের জন্য দায়ী। এটা কেবল পাকস্থলীতে ব্যথায় সৃষ্টি করে না পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের ক্ষতি করে। এই সময় পেঁপে না খাওয়াই ভালো। কারণ পেঁপে খেলে ব্যথা ও গর্ভপাত হতে পারে।
আনারসঃ আনারস একটা টক মিষ্টি ফল। এতে থাকা ব্রমালাইন নামক উপাদান জরায়ুর পথকে কোমল করে যা পারম্ভিক সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে আনারস খাওয়া গর্ব অবস্থায় ডায়রিয়া হতে পারে।
আঙ্গুরঃ গর্ভবতী নারীদের জন্য আঙ্গুর খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ বিশেষত্ব শেষের তিন মাস। কারণ আঙ্গুরে থাকা রেসভেরাট্রল নামক যৌগ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে যার ফলে গর্ভের শিশুর ও মা উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কোন কোন ভিটামিন ও খনিজ দরকার
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- আয়োডিন
- কোলিন
- ভিটামিন 'এ'
- ভিটামিন 'সি'
- ভিটামিন 'ডি'
- ভিটামিন 'বি১২'
- ফলিক অ্যাসিড
গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্য তালিকা
- ফলমূল
- শাকসবজি
- গ্রেইনস বা শস্য
- আমিষ
- ডেইরি
- তেল ও ফ্যাট(স্নেহ)
গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?
- কাঁচা, পাস্তুরায়ন ছাড়া দুধ এবং ওই ধরনের দুধ থেকে তৈরি কোমল পনির। এগুলোতে লিস্টেরিয়া নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা থেকে লিসটেরিওসিস নামের এক ধরনের রোগ তৈরি করতে পারে
- মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার। কারণ সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে
- কাঁচা ও পুরোপুরি রান্না না হওয়া মাংসজাত পণ্য যেমন শোষেজ ও কোল্ড কাট।
- কাঁচা মাছ ও সিফুড। কারণ এগুলোতে উচ্চমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী থাকতে পারে।
- কিছু মাসে উচ্চমাত্রায় পারদ থাকে এবং এগুলো এরে চলতে হবে। যেমনঃ হাঙর, সোর্ড ফিস, মার্লিন, ইত্যাদি প্রজাতির মাছ।
- আর রান্না না করা অঙ্কুরিত বীজ, খাদ্য শস্য ও শিম। কাঁচা মুলা,আলফারফাল বীজ ইত্যাদি।
- কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিম। কারণ এতে সালমোনিলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
- যকৃত ও অন্যান্য অঙ্গের মাংস খাওয়া যাবে না। কারণ যকৃতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকলেও এটা গর্ভধারিণী নারীদের ক্ষেত্রে বলা হয় না। কারণ এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ থাকে এবং এই মাংসে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url