যেসব খাবারে বা কারণে নবজাতক শিশুর পেট ব্যাথা হয়
নবজাতক শিশুর পেট ব্যথার কারণ ও করণীয় পেটে ব্যথা হলে মা-বাবা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কেননা, শিশুরা পেট ব্যথা শুরু হলে কাঁদে এবং কখনো কখনো ব্যথায় কাটতে থাকে।
আবার পেট ব্যাথা হলে বেশিরভাগ মানুষ ভাবে-ও কিছু নয়, হয়তো কৃমি হয়েছে। তবে পেট ব্যাথা হলে প্রেমিক সংক্রমণ ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।
যেসব খাবারে বা কারনে নবজাতক শিশুর পেট ব্যাথা হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
নবজাতক শিশুর মানসিক ও শারীরিক কারণে পেটে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে যেমন-বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে পেট ব্যাথা হতে পারে।
গ্যাসজনিত ব্যথা
বড়দের মতো শিশুদেরও পেটে গ্যাস হয়। নবজাতকের পেটে গ্যাস হয় মায়ের দুধ খাওয়ানের পদ্ধতি ত্রুটির কারণে। এতে বাচ্চারা বাতাস খেয়ে ফেলে, তাই তাদের পেটে গ্যাস হয়। বাচ্চাদের মধ্যে কান্না খুব স্বাভাবিক কারণ কান্নার মাধ্যমে শিশুরা তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করে এবং তাদের প্রয়োজনে তার প্রতি পিতা-মাতার মনোযোগ আকর্ষণ করে।
আরও পড়ুনঃ নবজাতক শিশুর পেট ব্যথার কারণ ও করণীয়
যদি শিশু কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ক্রমাগত অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁদতে থাকে তবে সেটা উপেক্ষা করা উচিত নয়। শিশুদের একই সঙ্গে নানা রকমের খাবার খাওয়ানো শুরু করলে গ্যাস জনিত ব্যাথা দেখা দেয়। এছাড়া, বড় শিশুরা অতি ভোজন, মসলাযুক্ত বা তৈলাক্ত কিংবা ঝাল খাবা্র, আচার ইত্যাদি খেলে পেটে এসিডিটি হয়ে ব্যথা হয়। এ ক্ষেত্রে এসিডিটির ওষুধ খেতে হবে। তবে ব্যথা প্রকট হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
তিন মাসের অধিক পেট ব্যথা
তিন মাসের অধিক পেট ব্যথা সাধারণত কোনো গরু তোর অসুস্থতা বা রোগের কারণে হয় না। তিন থেকে চার মাসের কম বয়সী শিশুরা তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কাঁদতে থাকলে এবং প্রতিদিন বা সপ্তাহের চার পাঁচ দিন সন্ধ্যার পর থেকে এবং প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা ধরে অবিরত কাটতে থাকলে তবে তা সাধারণত এ ধরনের পেট ব্যাথা হয়।
আরও পড়ুনঃকোরবানির গোশত বণ্টন করার সঠিক নিয়ম
এটি সাধারণত জন্মের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে দেখা যায় এবং তিন থেকে চার মাস বয়স হলে আর থাকে না। পরিপাকনালিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া " গাট মাইক্রো বায়োম" নামক ব্যাকটেরিয়াল কলোনি গড়ে ওঠা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে যা পরিপাক নালীর অপরিপক্কতা নামে পরিচিত। এ ধরনের ব্যথার ক্ষেত্রে বুকে ও পিঠে হাত দিয়ে মালিশ করলে, তল পেটের দিকে চেপে ধরলে শিশুর আরম বোধ হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য
যেসব শিশু গরুর দুধ বা বোতলের দুধ খায়, পাশাপাশি ৬ মাসের পর অপরিকল্পিতভাবে অন্য কঠিন খাবার খেতে শুরু করে বা শুধু সুজি, চালের গুড়ার খাবার খায় তাদের পেটে ব্যথার অন্যতম কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য। দুই কিংবা তিন দিন ধরে ঠিকমতো পায়খানা না হলে তা পেটের ভিতর জমে থেকে ব্যাথার সৃষ্টি করে। এজন্য শিশুকে নরম খাবার দিতে হবে।
অবস্থা জটিল হলে শক্ত খাবারের পরিবর্তে তরল জাতীয় খাবার যেমন সাগুদানা, মাতৃদুগ্ধ বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। এছাড়া কিছু ব্যায়াম করানো যেতে পারে যেমন সাইকেলের মত শিশু দুই পা চালনা করা। বড় শিশুদের শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার ও ফলমূল খাওয়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত মলত্যাগ করাই অভ্যস্ত করতে হবে।
খাবার কিংবা দুধে এলার্জি
শিশুর কোন খাবারে এলার্জি থাকলে তা খাওয়ানোর ফলে পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে গরুর দুধ বা গুঁড়ো দুধের Casein-Lactalbumin and Lactoglobulin প্রতি এলার্জি থেকে থাকে। এলার্জি আছে বিষয়টি সন্দেহ হলে বা নিশ্চিত হলে তা খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়া উচিত। এ ধরনের জটিলতায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কৃমি
কৃমি হলে বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, পেট মোটা বা ভারি হওয়া, খাবারে অরুচি, মুখে থুতু উঠা, এবং কোন কোন ক্রিমি তে পায়ুপথের আশেপাশে চুলকানি হতে পারে। কৃমি হলে সাধারণত অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। নোংরা পরিবেশ, ও নিরাপদ পানি পান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যা্স, খালি পায়ে হাটা কৃমি সংক্রমনের জন্য দায়ী।
ওষুধ নিয়ম মেনে খেলে আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সহজে কৃমি দূর করা যায়। প্রতি তিন মাস পর পর পরিবারের সবাই একটি করে "অ্যালবেনডাজল" বরি সেবন করলে অথবা " মেবেন ডাজল" পরপর তিনদিন খেতে হয়। সাতদিন পর দ্বিতীয় ডোজ খেতে হয়। শিশুদেরও একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে। তবে দুই বছরের নিচে কোন শিশুকে খাওয়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বয়স ভেদে সমস্যা ও কারণ
দুই বছরের নিচে শিশুদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, ডায়রিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া, প্রভৃতির কারণে পেটব্যথা হয়। অন্ত্রে প্যাচ খাওয়া বা ইন্টাসাসেপশন নামের জটিল সমস্যা হতে পারে। বড় শিশু ও পালক বালিকাদের বেলায় এসব ছাড়া কৃমি, অ্যাপেন্ডিসাইটিস, প্রস্রাবে সংক্রমণ, অগ্নাশয় ও যকৃতের কোনো সমস্যা সন্দেহ করা যেতে পারে। কিশোরীদের বেলায় মাসিক-সংক্রান্ত সমস্যা ও প্রস্রাবের সংক্রমণের দিক অধিক মনোযোগ দেওয়া উচিত। এ বয়সের বালক বালিকার বেলায় মানসিক চাপ ও আঘাত এমনকি খাদ্যে বিষক্রিয়ার কথা ভাবতে হবে।
উপদেশ ও সতর্কতা
নবজাতক ও ছোট শিশুদের প্রতিভার দুধ খাওয়ানোর পর বাচ্চার ঢেকুর তোলানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাসের সমস্যা এবং শিশুদের পেট ব্যথা উপশম করাতে হাঁটু বাঁকানো ব্যায়াম কার্যকর। বাচ্চা কে শীত করে শোয়ানোর পর তার পা দুটিকে হাটুর দিকে ভাগ করে পা দুটি পেটের দিকে ঠেলে দিতে হবে। ছোট শিশুদের প্রথম খাবারের অভ্যাস করার সময় ধীরে ধীরে প্রথমে তরল, নরম খাবার তারপর খিচুড়ি বা পিসপাস অর্থাৎ চাল,কল, সবজি, ছোট মাছ, মুরগির মাংস, ডিম মিশ্রিত খাবার। কোন খাবারে অ্যালার্জি আছে কিনা খেয়াল করতে হবে এবং সেটি বাদ দিতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url