চিরতরে মেছতা বা ব্রণ দূর করার উপায়
মেছতা বর বর্ণ
মেছতা বা প্লাজমা ত্বকের এক ধরনের অসুখ। সাধারণত শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে গালে মেছতা দেখা দেয়। আবার দীর্ঘ সময় রোদে থাকার কারণে আল্ট্রা ভায়োলেট রোশনি থেকেও মুখে দাগ বের হয়। থাইরয়েড অসুখ এবং রক্তচাপের ওষুধ ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে মেস্তা বা প্রাণ বের হতে পারে। মাঝে মাঝে মুখে ব্রণ উঠে এবং তা থেকে একপর্যায়ে দাগের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া অনেক সময় মুখে দাগও দেখা দেয় যা মেস্তা বা ব্রণ নামে পরিচিত। এসব দাগ নিয়ে অনেকেই বিব্রত অবস্থায় পড়েন। কারণ এই দাগ মুখে সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট করে দেয়। সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ নিখুঁত মুখের ত্বক। কিন্তু সৌন্দর্য তো পরের বিষয় তার আগে মুখের নানা রকম দাগ নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তায় ভুগেন। কারণ তাদের জানা নেই দাগ দূর করার উপায়। এই জন্যই বাজারজোল তে নানা রকম ব্যবহার করে থাকেন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে মেছতা বা ব্রণের দাগ দূর করবেন
প্রতিদিন ব্রনের দাগের উপরে মধু লাগাতে পারেন। এতে দাগ ফিকে হয়ে আসবে।, তবে মধু ব্যবহারে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
তৈলাক্ত ও সাধারণ ত্বকের দাগ দূর করার জন্য শসার রস, আলুর রস খুবই উপকারী। শসার রস, আলুর রস দিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিতে পারলে উপকার পাবেন।
- শুধুমাত্র তৈলাক্ত ত্বকের দাগ দূর করতে টক দই, লেবুর রস ও আটা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। সপ্তাহে দুদিন এটি ব্যবহার করুন খুব তাড়াতাড়ি এর ফল পাবেন।
- এলোভেরার রস প্রতিদিন ব্রনের দাগের ওপর লাগালে দ্রুত তা ফিকে হয়ে মিলিয়ে যাবে
- তৈলাক্ত ত্বকে মুলতানি মাটি, লেবুর রস ও টক দই মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এতে উজ্জ্বলতা বাড়বে ও দাগ কমবে।
- যে কোন ত্বকের দাগ কমাতে পাকা কলার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
- রসুন ও লবঙ্গের মিশ্রণ করে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে লাগিয়ে নিন এবং সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- নিয়মিত লেবুর রস মুখে লাগাতে পারেন।
- গুড়া দুধ ও গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
- আমন্ড ওয়েল ও মধু মিলিয়ে মুখে হালকা করে ঘোষুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- কমলা লেবুর খোসা গুড়া করে তার সঙ্গে দুধ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।
- মেস্তা বা ব্রনের জায়গায় লেবুর রস ও সামান্য ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন।
মেছতা দূর করার জন্য কোন ক্রিমটি ভালো
হাইড্রোকুইন পূর্ণটি সরাসরি ত্বকের মেছতায় প্রয়োগ করতে পারেন। হাইড্রোকুইনোন ত্বকের মেছতার রং হালকা করতে কাজ করে। কিছু ক্ষেত্রে একজন চর্ম বিশেষজ্ঞ সংমিশ্রণ টিম লিখতে পছন্দ করতে পারেন যার মধ্যে একটিতে হাইড্রোকুইনোন, ্কার্টিকোস্টেরয়েড এবং ট্রেটিনইন থাকতে পারে। এগুলোকে ট্রিপল ক্রিম বলা হয়।
মেছতা বা ব্রণ হওয়ার কারণ কি
মুখ-কপাল সহ বুকে হতে পারে মেছতা। জিনগত সমস্যা, অস্বাভাবিক হরমোন ক্ষরণ, ঘুমের অভাব, পরিমাণ মতো পানি পান না করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা করা, ঘাম হওয়ার পরও পরিচ্ছন্ন না হওয়া, অতি বেগুনি রশ্নি ইত্যাদি এসবের কারণে মেস্তা বা ব্রণ হয়। আবার হাইপারপিগমেন্টেশনেও মেছতা বা ব্রণ বের হওয়ার কারণ।
প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ফর্সা করার উপায়
দুধ,বাটারমিল্ক, এমনকি টক দুধ সবই ত্বকে হালকা করতে সাহায্য করে কারণ এতে ল্যাকটিক এসিড থাকে। একটি তুলোর বল সাধারণ দুধের ভিজে সমস্ত আক্রান্ত স্থানে লাগে 20 থেকে 30 মিনিট পর ধরে ফেলতে পারেন। এটি প্রতিদিন দিনে একবার বা দুবার করে করতে হবে। দুধ কার্যকর ভাবে ত্বককে হাইড্রেট করতে পারে। এছাড়াও এলোভেরা জেল, চন্দন গুড়া হলুদ গুঁড়া লেবুর রস, কমলা লেবুর খোসা ইত্যাদি মিশেও ত্বকে লাগিয়ে রাখে ধরে ফেললে ত্বকে উজ্জলাতে আসে।
আলুঃ আলুতে কেটেকোলেজ এনজাইম থাকে। এটি ত্বকের কালো দাগ দূর করে এবং স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনে। একটি ছোট আলু গ্রেট করে মুখে লাগান 15 থেকে 20 ধুয়ে ফেলুন।
চন্দনঃ চন্দন মুখের কালো দাগ দূর করতে দারুন কার্যকর। এতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ব্রণ, মেছতা ও কালো দাগ দূর করে। এক চা চামচ চন্দন গোড়ার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট করে মিশ্রণটি ১০-১৫ থেকে মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। যেন কোনোভাবেই চোখে না যায়। ধোয়ার পর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের উষ্ণতা বাড়বে।
কমলার খোসাঃ কমলার খোসায় আছে এন্টিফাঙ্গাল উপাদান। এটি মুখের কালো সব দাগ ও ব্রণ দূর করে। খোসা পেটে হলুদ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি দশ মিনিট মুখে লাগিয়ে গোলাপ জল দিয়ে ধুয়ে মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
লেবুর রসঃ তাজা লেবুর রস দাগে লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
কাঁচা দুধঃ কাঁচা দুধ ত্বককে এক্সফোলিয়েন্ট করে। দুধে পরিমাণ মতো হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে 10 থেকে 15 মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অ্যালোভেরাঃ এলোভেরা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিদিন এজেল তোকে দিলে দাগ কমে এবং উপকারীর কলাজেন ও বের হয়। ত্বকের ঘা বা ফোরাও দূর কর।
টমেটোর রসঃ লাইক অপেন সমৃদ্ধ টমেটোর রস মুখের দাগ দ্রুত দূর করে এবং ত্বকের খোলা পরশ সংকুচিত করতে সাহায্য করে।
পেঁপেঃ পাকা পেঁপে ভালো ভাবে শুটকে মুখে মাখতে হবে।
হলুদঃ ট্রেট্টা হাইড্রোকারকিউমিন হলুদের একটি নির্যাস। একটি কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। হলুদের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ডিমের সাদা অংশঃ রাতে ঘুমানোর আগে একটি ডিমের সাদা অংশ হালকা করে মুখে ম্যাসাজ করে রাখুন। অন্যদিকে যাদের মেছতার সমস্যা আছে তাদের ত্বকে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, পিয়াজ বা পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়।
ব্রণের জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার
ত্বকের দাগ দূর করতে প্রসাধনে যে রাসায়নিক থাকে তা অনেক সময় ক্ষতির দিকে আনে। সে ক্ষেত্রে অনেকের তকে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। মেস্তার চিকিৎসা আছে হোমিওপ্যাথিতেও। ত্বকের দাগ দূর করতে যেসব হোমিওপ্যাথি ওষুধ রয়েছে তার মধ্যে বারবারিস একোপুলিয়াম উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া লক্ষণ অনুসারে থুজা, সিফিলিনাম,কেলিব্রোম, আর্সেনিক, সিফিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। তবে এসব নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত।
এছাড়াও বাজারে মেস্তা বা ব্রণ দূর করার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রোডাক্ট বা পণ্য বের হয়েছে। যার অনেকগুলোই ভালো আবার অনেকগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে ত্বকে স্থায়ীভাবে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় সাথে ছোপ দাগ ও বের হয়। যা মুখে সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url