ছাদ বাগান-ছাদ বাগান করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
ছাদ বাগানের- গাছের রোগ বালাই ও প্রতিরোধ কাঠের নাগরিক সভ্যতার শহরগুলো থেকে দুটো হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু মানুষটা শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজে ভরা গ্রাম বাংলায় বেড়ে ওঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চাই আবাসস্থলে।
তাই সৌখিন মানুষেরা তাদের ঘর বাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদ বাগান। একটা সময় ছাদ বাগান শৌখিনতার কারণ হলেও বর্তমান সময়ে বাগান এখন আর শৌখিনতায় আটকে নেই। নিরাপদ সবজি দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ পারিবারিক বিনোদন এবং অবসর কাটানোর এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে এরশাদ বাগান গুলো। বাংলাদেশের শহরে কৃষি ব্যবস্থার সৌখিন পথযাত্রা সময় বিবর্তনে এক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিতে যাচ্ছে।
ছাদ বাগানের গুরুত্ব
- তাজা শাকসবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়
- বাড়তি আয় ও অবসর সময় কাটানো যায়
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়
- ছাদের সবুজ চত্বর ও বাগান বিনোদন দিতে পারে
- পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা যায়
- জীববৈচিত্র বা বায়োডাইভারসিটি সংরক্ষণে সহায়তা করতে পারে
- অবকাঠামো তৈরিতে যে পরিমাণ চাষের জমি নষ্ট হয় ছাদে বাগানের মাধ্যমে তার কিছু অংশ পুষিয়ে নেওয়া যায়
- বাড়ির পরিবেশ শীতল ও শান্তিময় থাকে
ছাদ বাগান কিভাবে করব
মাঝারি কাজ বিশেষ করে ফলের গাছ ও লতানো গাছ লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম বা বড় পাত্র নিবেন। ফুল গাছ ও ছোট গাছ লাগানোর জন্য ছোট পাত্র নেবেন। সাত বা সবজি লাগানোর জন্য কাঠ বা জিআই পাত দিয়ে তৈরি করা ট্রে ব্যবহার করতে পারেন। মাটি, সিরামিক, সিমেনট, প্লাস্টিক ইত্যাদি পাত্র ফল ও ফল গাছ লাগানোর জন্য নিতে পারেন।
ছাদে বাগান করতে যা করা জরুরী
চইট পাথরের এই ছোট্ট জীবন একটুখানি সবুজ এনে দিতে পারে অনেকখানি প্রশান্তি। কিন্তু যেভাবে খালি জমি দখল হয়ে গড়ে উঠেছে দালান কোঠা, কাটা হচ্ছে গাছপালা তাতে সবুজের দেখা পাওয়া যেত কঠিন। তবে চাইলে এই ঈদ পাথরের বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মত আমরাও করতে পারি ছোট্ট একটু সবুজের বাগান। ইতিমধ্যেই শহরে অনেক বাসা বাড়ির ছাদে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক সাইজের ছাদ বাগান।
পাকা বাড়ির খালি ছাদে বেড তৈরি করে অথবা টবে বা ড্রামে চাষাবাদ করে যে বাগান গড়ে তোলা হয় তাকে ছাদবাগান বলা হয়। যে বাগান আধুনিক ব্যস্ত নগর জীবনে এনে দিতে পারে প্রশান্তির ছোঁয়া। হাত বাগানবাড়ি টপ চোরকে তুলনামূলক শীতল রাখে, দূষণমুক্ত রাখে পরিবেশ। পাশাপাশি জীববৈচিত্র রক্ষায় সাপ বাগানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে সব স্বাদ আবার বাগান করার উপযোগী না হতে পারে। ছাদ বাগানের কাজ ভালো রাখতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
গাছে পানি দেওয়ার উত্তম সময় ভোরে অথবা সন্ধ্যায়। মাটির টপ অথবা প্লাস্টিকের বোতল অথবা বালতিতে গাছ লাগানো যায়। হাতের গাছের যত্নে মূল বিষয় হচ্ছে পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং পর্যাপ্ত পানি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মাটির আদ্রতা দেখে পানি দিতে হবে। এছাড়াও সাধু একটি পরিকল্পিত বাগান গড়ে তুলতে চাইলে প্রথমে কিছু প্রয়োজনের বিষয়ে বিশেষভাবে বিবেচনায় আনা জরুরি। তাহলো-
- ছাদের ধারণ ক্ষমতা
- সূর্যের অবস্থান
- বাতাসের দিক
- পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা
- মাটির প্রকারভেদ
- ভালো মানের গাছ বাছাই করা
- ফল, ফুল এবং শাকসবজি চাষাবাদ করা
ছাদে বাগান করার সময় যে সব বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন
- এমন ছাদে বাগান করা উচিত যা গাছপালার ভার সহ্য করতে পারে এবং দ্রুত ছাদ থেকে পানি নিষ্কাশিত হয়ে যেতে পারে
- অপেক্ষাকৃত বড় গাছপালা ছাদের বিম্ব বা কলামের কাছাকাছি স্থানে স্থাপন করতে হবে
- খেয়াল রাখতে হবে স্বাদ যেন ড্যাম বা স্যাতস্যাতে না হয়। এজন্য রিং বা ইটের ওপর গ্রাম অথবা স্থাপন করতে হবে
- ছাদে কি কি গাছ লাগাবেন তার একটি পরিকল্পনা ও নকশা করে নিতে হবে
- ছাদ বাগানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
- একটি খালি খোলা ছাদ
- হাফ ড্রাম, সিমেন্ট বা মাটির টব, স্টিল বা প্লাস্টিক ট্রে
- ছাদের সুবিধামতো স্থানে স্থায়ী বেড ( ছাদ ও বেডের মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে )
- সিকেচার, কোদাল, কাচি, ঝর্ণা, বালতি,করাত,খুরপি,স্প্রে মেশিন ইত্যাদি
- দোআঁশ মাটি, পচা শুকনো গোবর ও কম্পোস্ট, বাল ও ইটের খোয়া ইত্যাদি
- পানি দেওয়ার ব্যবস্থা
- গাছের চারা, কলম বা বীজ
ছাদ বাগানের জন্য প্রয়োজনীয় পাত্র নির্বাচন
ছাদ বাগানের জন্য বড় মাটির টব ভালো। যদি ছাদ ভার সইতে পারে তবে কংক্রিটের বা সিরামিকের পাত্র তৈরি করে নেওয়া যায়। না হলে প্লাস্টিকের টপ,ট্রে বা ড্রাম নিতে পারেন। খালি টিনের বাক্স, কাঠের পেটি বাক্স, পুরনো পানির পাত্র ইত্যাদিও গাছ লাগানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। তবে যে পাত্র নিবেন দেখবেন তাতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র আছে কিনা।
মাঝারি গাছ বিশেষ করে ফলের গাছ ও লতানো গাছ লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম বা বড় পাত্র নেবেন। ফুল গাছ ও ছোট গাছ লাগানোর জন্য ছোট পাত্র নেবেন। শাকসবজি লাগানোর জন্য কাঠ বা জিআই পাত দ্বারা তৈরি করা ট্রে ব্যবহার করতে পারেন। ফল গাছের জন্য তিন বা প্লাস্টিকের বড় ড্রাম হলে ভালো হয়। ফুল গাছ লাগানোর জন্য ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার মুখের মাটি বা সিমেন্টের টব হলে ভালো হয়।
ছাদ বাগানের জন্য মাটি তৈরি
ছাদ বাগানের জন্য মাঠে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শাক ও অগভীর মুলি ফুল গাছ লাগানোর জন্য 15 থেকে 20 সেন্টিমিটার পুরু মাটির স্তর থাকলেই চলে। কিন্তু মাঝারি ও যেসব গাছের শিকড় বড় হয় সেসব গাছ লাগানোর জন্য মাটির গভীরতা কমপক্ষেয়া৫০ সেন্টিমিটার হতে হবে। দোআঁশ মাটি হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এই মাটির সাথে ২ঃ১ অনুপাতে মাটি ও জৈব সার আলাদা করে মিশিয়ে কয়েক দিন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে দেবেন। যদি রাসায়নিক সার মিশানোর দরকার হয় তাহলে তার মাটি তৈরির সময় মিশিয়ে নিবেন।
ছাদে বাগান করার জন্য সাধারণ পদ্ধতি
- হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি বাসের ৫ থেকে ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে।
- ছিদ্র গুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে
- ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া বিছিয়ে তার ওপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে
- সমপরিমাণ দোআঁশ মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয় অংশ ভরার পর প্রতিহাব ড্রামে মিশ্র সার আনুমানিক ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সম্পূর্ণ ড্রামটি মাটি দিয়ে ভর্তি করে নিতে হবে
- ১৫ দিন পর ড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড় ও মরা শিখরসমূহ কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন ভেঙে না যায়
- রোপিত গাছটি খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে
- রোপনের পর গাছের গোড়া ভালোভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে
- সময় সময় প্রয়োজন মতো গাছে পানি দিতে হবে ও উপরে সার প্রয়োগ এবং বালাই দমন ব্যবস্থা নিতে হবে
- রোপনের সময় প্রতিটি হাফ ড্রামে ৪-৬ টি সিল্ভামিক্স ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া থেকে ১৫ সেন্টিমিট্র দূর দিয়ে মাটির ১০ সেন্টিমিটার গভীরে প্রয়োগ করতে হবে
- এ ছাড়া লতানো গাছের জন্য বাওনি, জাংলা, মাচা দিতে হবে। ছাদ বাগানের আগাছা দমন করতে হবে।ছেচের পর মাটিতে চটা বাধলে মালচিং করে ইতে হবে। অপ্রয়োজনীয়,বয়স্ক,মরা শাখা অপসরন করতে হবে।প্রয়োজনে ফল ধারন বৃদ্ধির কৃত্রিম পরাগায়ণ করা যেতে পারে
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url