ফরমালিনযুক্ত আম খাওয়ার অপকারিতা

আলু চাষের পদ্ধতি-আলু চাষে যেভাবে লাভবান হবেনফরমালিন যুক্ত আম দেখতে হলুদ রঙের হয়। ফরমালিন যুক্ত আম খেলে আপনার কিডনি ও নষ্ট হতে পারে। এমনকি গর্ভবতী মহিলা যদি এই ফরমালিনযুক্ত আম খায় তবে তার গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
ফরমালিনযুক্ত আম খাওয়ার অপকারিতা

অধিক লাভের আশায় ফরমান যুক্ত আম, ব্যবসায় লাভের আশায় লোকজনকে না খাওয়ানোই ভালো। কাঁচা আম পাকানোর সহজ একটা পদ্ধতি আছে। সাধারণত ধোয়া ভর্তি ঘরে আম পাকানো যায়। এভাবে পাকানো আমে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। আম পাকানোর জন্য এটাই স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি। এছাড়া কাপড়ে জড়িয়ে রেখো আম পাকানো যায়।

আমে কেমিক্যাল ব্যবহার করা কি ক্ষতিকর

দেখতে আকর্ষণীয় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় প্রায় সব বয়সী মানুষেরই পছন্দ আম। আমের রয়েছে আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। সাধে এবং গন্ধে অতুলনীয় আম সাধারণত উষ্ণ ও অব উষ্ণমণ্ডলেও অঞ্চলে জন্মে। ইন্দ্রোনেশিয়া-বার্মা অঞ্চলে আমের উৎপত্তিস্থল বলে ধারণা করা হয়। তবে বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার ও পুষ্টিমানের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল হল আম। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে আম জন্ম হয়। দেশের উত্তরাঞ্চল সাতক্ষীরা, মেহেরপুর এবং কুষ্টিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। তাই আমি কেমিক্যাল ব্যবহার নিয়ে লিখেছেন ডক্টর তাইরুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন-

সে কথা অনুস্বীকার্য যে, গত কয়েক বছর যাবত আমের উৎপাদন বেড়েছে বহু গুনে। উত্তরাঞ্চল সারি আম এখন ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বাংলাদেশে। আমরা এখন আম উৎপাদনে বিশ্বের ৮ম অবস্থানে। এসব ভালো খবর প্রচারের সাথে যোগ হয়েছে অপপ্রচারক। 
ফল নিয়ে নানা অপপ্রচারের কারণে বৃত্ত শালী অনেকে আতঙ্কে দেশীয় আম খাওয়া ছেড়ে দিয়েছন। গবেষণা ছাড়া আম নিয়ে নেতিবাচক অনেক গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে দেশীয় ফলের বাজার চলে যাচ্ছে মাফিয়াদের হাতে। এতে উপকৃত হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানের আম ব্যবসায়ীরা। যারা ইউরোপে আমর রপ্তানি করে আয় করছে লাখ লাখ ডলার ইউরো। ভেজাল বিরোধী নানা অভিযানের ফলে আজ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।

আমের মধ্যে কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে-এ কথা ভেবে যদি আমরা আম খাওয়া ছেড়ে দেই তাহলে আমরা পুষ্টিগণ থেকে বঞ্চিত হব। আম নানা পুষ্টি উপাদানের ভরপুর যা শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি কর্মশক্তি যোগাতে ও সহায়তা করে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ১৩ টিম থাকে। এতে ১.৩ গাম আয়রন, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,১৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.৯ মিলিগ্রাম রিভাফ্লভিন, এবং ০.০৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন থাকে। এছাড়াও পাকা আমের রয়েছে জিনসহ প্রচুর ভিটামিন বি-১ ও বি-২। এসব সহজলভ্য পুষ্টি উপাদান না গ্রহণ করার ফলে নানা রোগ বালাইয়ের সমস্যা যেমন তৈরি হচ্ছে তেমনি অপুষ্টিতেও ভুগছে অসংখ্য মানুষ।

এবার আসি বাজারের কিছু চাকচিক্য প্রচারণায়। কেমিক্যাল কিংবা কার্বাইড ও ফরমালিন যুক্ত আম এখন এক ধরনের প্রচারণা মাত্র। আর এসব প্রচারণা চালিয়ে দুষ্টচক্রের ব্যবসায়ীরা হাতে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ইতোমধ্যেই ফরমালের ও কার্বাইড এর ব্যবহার আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিষিদ্ধ রয়েছে। আর ইথাফল হলো বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত ফল পাকানোর রেজিস্ট্রাট কেমিক্যাল। নির্দিষ্ট মাত্রায় ফল পাকানোর কেমিক্যাল হিসেবেই তা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে কার্বাইড নিষিদ্ধের কারণ হলো, এর মধ্যে বিভিন্ন অপদ্রব্যের উপস্থিতিত যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

এছাড়া কার্বাইড ফলের মধ্যে প্রবেশ করে না, কার্বাইড হিট উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় যা আম অথবা অন্য ফলকে পাকাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে ইথাফল প্রয়োগ করা হলেও সেটা কম সময়ের মধ্যেই ( ২৪ ঘন্টা) নির্ধারিত মাত্রার নিচে চলে আসে। আর ইথাফল কিংবা কার্বাইড দিয়ে পাকানো আমের স্বাদে কিছুটা তারতম্য মনে হলেও এর পুষ্টি উপাদানে খুব বেশি পরিবর্তন হয় না।

বালাইনাশক বা ছত্রাক নাশক আম আমাদের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর? গত তিন বছর ধরে আমের মধ্যে বিষক্রিয়ার উপস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন কৃষি গবেষণার কীট তত্ব বিভাগের পেস্টিসাইড এনালাইটিক্যাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা। বালাইনাশকের উপস্থিতির মাত্রা নিয়ে কাজ করা সিনিয়র বিজ্ঞানে ডক্টর দেলোয়ার হোসেন প্রধান জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত আমেরিকার গবেষণা মাত্র ৮-১০% আমের মধ্যে বালাই নাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার আবার শুধু ৩-৪% Maximum Residui Limit (MRL) অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ সামগ্রিক হিসেবে হয়তো ১-২% আমের মধ্যে বালাই নাশকের উপস্থিতিতে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের গবেষণাগুলো আমাদের জাতীয়ভাবে খুব বেশি প্রচার পায় না বলেই আমরা যা খুশি বলে দেই। আর এতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের অর্থনীতি।

আম পচনশীল ফল। বেশি পাকা অবস্থায় সংগ্রহ করলে সংরক্ষণ কাল কম হয়। অধিকাংশ জাতের আম ১৩-১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ও ৮৫-৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় বাঁশের ঝুড়ি, বাস্কেট, খর বিছানো স্থানে ৩-৫ সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়। গাছ থেকে সাবধানতার সাথে আম পেড়ে আমের আটা বা কস ছাড়িয়ে ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা গরম পানিতে শোধন করে ভালো মতো শুকিয়ে তারপর প্যাকেটজাপ করলে এতেও ভালো ফল পাওয়া যায়। আম পারার পর চুন পানিতে কিছুক্ষণ চুবিয়ে তারপর ভালোমতো শুকিয়ে রাখলে আমের ইস্টেম এন্ড রট নামক রোগ থেকে বাঁচা যায় যার ফলে আম অনেকক্ষণ সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

ফরমালিন যুক্ত আম চেনার কয়েকটি উপায়

আমের ভরা মৌসুম চলছে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে হিমসাগর, ফজলি, ল্যাংড়া বা আম্রপালি আমের স্বাদের অপেক্ষায় থাকে বাঙালি। কিন্তু এখন আমের মধ্যে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকারক ফরমালিন। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফল খেলে কিডনি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে বিকলাঙ্গতা এমনকি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই জেনে নিন ফরমালিনযুক্ত আম চেনার উপায়-
  • প্রাকৃতিকভাবে পাকা আমের বৃন্তে সুঘ্রাণ মিলবে। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আমের বৃন্তে কোন ঘ্রাণ থাকবে না। তাই আম কেনার আগে গন্ধ শুঁকে দেখে নিতে পারেন।
  • আমের রং দেখেও চেনা যায় ফরমালিন যুক্ত। প্রাকৃতিকভাবে পাকা আমের হলুদ এবং সবুজের একটা মিশ্রণ থাকে। আবার আমের গায়ের সাদাটে বা কালো দাগ দেখা যায়। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত বা অন্যান্য কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আমগুলো দেখতে খুব সুন্দর, চকচকে আর সম্পূর্ণ হলুদ রংয়ের হয় এবং দাগও কম থাকে।
  • প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম বেশ মিষ্টি হয় এবং সেগুলি অনেক বেশি রসালো হয়। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আমের রস অনেক কম থাকে।
  • প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম মুখে দিলে টক মিষ্টি স্বাদ মেলে। তাছাড়া এই আমে মাছি ও বসবে। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আমি তেমন কোনো স্বাদ পাওয়া যায় না আর এগুলোতে মাছিও বসে না।
  • ফরমালিন যুক্ত আম খেলে পেটে ব্যথা, গলা জ্বালা এমনকি ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।

ফরমালিনের ক্ষতিকর প্রভাব ও এর প্রতিরোধের উপায়

বাজারে এখন থেকে বিভিন্ন ধরনের আম পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু সবাই আমরা একটা ভয়ে যেন আম কেনার সাহস করতে পারছি না। আর সেটা হল ফরমালিন। কিন্তু একটু চেষ্টা করলে আমগুলোকে আমরা নিজেরাই ফরমালিন মুক্ত করতে পারি।

তাহলে চলুন জেনে নেই আমাদের শরীরের উপর ফরমালিনের ক্ষতিকারক প্রভাব এবং এ থেকে বাঁচার উপায়-

ফরমাললিনের ক্ষতিকারক প্রভাব

  • ইকো সিস্টেম মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • নাকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হওয়া
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • ত্বকে জ্বালাপোড়া হওয়া
  • অনেকদিন ধরে ফরমালডিহাইড এর সংস্পর্শে থাকলে সে রক্তকণিকা পরিবর্তন হতে থাকে
  • ব্রেইন, নাক, ফুসফুস ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে
  • কিডনিতে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে
  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর কারণে গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ থেকে শুরু করে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।
  • এলার্জি এবং এজমার উদ্বেগ ঘটায়
  • প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়
  • হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত করে
এছাড়া বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়

খাবার কে ফরমালিন মুক্ত করার উপায়

এক বালতি গরম পানি নিন। পানি যত পরিমান নিবেন তার দশ ভাগের এক ভাগ লবণ, পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার বাজার থেকে যে কোন খাবার কিনে এনে এতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফরমালিন সহ অন্যান্য কেমিক্যাল ও চলে যাবে। এতে করে খাবার থেকে প্রায় 95% কেমিক্যাল চলে যাবে। তবে বিভিন্ন খাবারের ক্ষেত্রে ভিজিয়ে রাখার সময়টি ভিন্ন হয়। যেমন-
  • শাকসবজির ক্ষেত্রে ১০১৫ মিনিট
  • ফলের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১ ঘন্টা
  • মাছ-মাংসের ক্ষেত্রে ১ ঘন্টা
এছাড়া পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে তাতে খাবারটি ভিজিয়ে রেখেও ফরমালিন দূর করা সম্ভব।

আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টে আমাদের কাছে জানান এবং ভাল লাগলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url