কোয়েল পাখি পালন- যেভাবে লাভবান হবেন
হাঁস পালনে পদ্ধতিকোয়েল পাখি পালন করা হবে সেই খাঁচার জালের ভাগ গুলো একটু ঘন হতে হবে। জাতীয় মুখ বা গলা সেই ফাঁক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে না আসে।
এছাড়াও কোয়েলের পাখির খাচায় যেন ইঁদুর, ছুচো, ইত্যাদি না ঢুকতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে ভাষায় পানি রাখার পাত্র উল্টে যেন পাখির গা ভিজে না যায়।
কোয়েল পাখি পালনের সঠিক নিয়ম
কোয়েল আমাদের দেশের অতি পরিচিত পাখি। এ পাখির আদি নিবাস জাপানে। অনেকে শখ করে কোয়েল পাখি পালন করেন বাড়িতে। একে সহজে পোষ মানানো যায় এবং পালনের জন্য অতিরিক্ত কোনো চাপ নিতে হয় না। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোয়েল পাখি পালনের কিছু নির্দেশনা-
বাড়িতে কোয়েল পাখি পালনের জন্য প্রথমে উপযুক্ত খাচা তৈরি করতে হবে । এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের খাচা রয়েছে যেমন-লেয়ার খাঁচা, ব্রিডার খাঁচা, ব্রডার খাঁচা, বিয়ারিং খাচা ইত্যাদি। তবে অল্প জায়গায় যদি বেশি সংখ্যক কয়েল পাখি পালন করতে চান তাহলে ব্যাটারি পদ্ধতি ব্যবহার করাই ভালো। আমাদের দেশে চাষ করার মতো কোয়েল পাখির দুটি জাত রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
এদের একটি হল লেয়ার কয়েল পাখি এবং অপরটি হল বয়লার কোয়েল পাখি। এই পাখি চাষের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। আপনি চাইলে বছরের যে কোন সময়ে কোয়েল পাখির চাষ করতে পারেন। এতে বেশি পরিশ্রমও করতে হয় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোয়েল পাখির বাসায় যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকে। এছাড়াও কোয়েল পাখির বাসা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ময়লাযুক্ত ডিম সাধারণত রোগ ও জীবাণুর প্রধান উৎস।
তাই কোয়েল পাখির বাচ্চা ফোটানোর জন্য সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ডিম বসাতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন বাচ্চা ফোটানোর ডিম কখনো ধোয়া উচিত নয়। কোয়েল পাখির ডিম ফোটানোর সময় ডিমে তা দেয় না। কোয়েল পাখির বাচ্চা সাধারণত ইনকিউবেটরে ফুটানো হয়। এই কাজ সম্পাদন করতে প্রায় ১৬-১৮ দিন সময় লাগে। যদি বাড়িতে কোয়েল পাখি চাষ করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ডিম ফোটাতে চান তাহলে স্ত্রী কোয়েল পাখি প্রতিপালন অধিক লাভজনক। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোয়েল পাখি পালনের ব্রুডারের তাপমাত্রা যেন সব সময় সঠিক নিয়মে থাকে। তা না হলে কোয়েল পাখির ক্ষতি হতে পারে।
কোয়েল পাখির সুষম্ম খাদ্য ও রোগ বালাই
কোয়েল পাখির সুষম খাবারের প্রয়োজন হয় না। বর্তমান বাজারের বয়লার মুরগির খাদ্য এবং পশু খাদ্য হিসেবে মিক্সার খাদ্যই তাদের সাধারণ খাবার। শুধুমাত্র ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পর কিছুটা বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এই সময় কোয়েলের বাচ্চাকে সুষম খাদ্য প্রদান করতে হয়। তবে খেয়াল রাখবেন কোয়েলের খাঁচায় যেন যথেষ্ট পানি ব্যবস্থা থাকে। এবং কোয়েল পাখিকে দিনে তিনবার খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন
কোয়েল পাখির রোগ বালাই
কোয়েল পাখির বেশ কিছু রোগ বালাই দেখা যায়। তার মধ্যে আমাশয় উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোয়েলের বাচ্চার নিউমোনিয়া হয়েও মারা যেতে পারে। এর জন্য ব্রুডারে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। তবে যদি কোন পাখি অসুস্থ হয় তাহলে তাকে অন্য পাখি থেকে আলাদা রাখতে হবে। অসুস্থ কোয়েল পাখির সংস্পর্শে থাকলে বাকিরা আক্রান্ত হতে পারে।
লাভজনক ভাবে কোয়েল পাখি পালন
পোল্ট্রিতে ১১ টি প্রজাতি রয়েছে, তার মধ্যে কোয়েল পাখি এপিসোড তো আকারের গৃহপালিত পাখি। অন্যান্য পোল্ট্রি তুলনায় কোয়েলের মাংস এবং ডিম গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট। আনুপাতিক হারে কোয়েল পাখির ডিমের কোলেস্টেরল কম এবং আমিষ বেশি। একটি মুরগির পরিবর্তে আর্থিক কোয়েল পাখি পালন করা সম্ভব। কাজেই বাড়ির আঙ্গিনায় ঘরের কোণে ১০-২০ টা কোয়েল পাখি অতি সহজেই পালন করা সম্ভব। কোয়েল পাখি প্রতিপালন করে পারিবারিক পুষ্টি যোগানোর সাথে সাথে অতিরিক্ত কিছু আয় করা সম্ভব। স্বল্প মূল্যে অল্প জায়গায় অল্প খাদ্যে কোয়েল পাখি পালন করা যায়।
কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা
- কোয়েল পাখির দ্রুত বাড়ে, ৬-৭ সপ্তাহের ডিম পারা শুরু করে এবং বছরে ২৫০২৬০ টি ডিম পাড়ে
- কোয়েল পাখির ডিমের কোলেস্টেরল কম এবং প্রোটিনের ভাগ বেশি থাকে
- কোয়েল পাখির দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশি
- ৮-১০ টা কোয়েল পাখি একটি মুরগির জায়গায় পালন করা যায় এবং ১৭-১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়
- কোয়েল পাখির রোগ বালাই খুব কম এবং খাবার খুবই কম লাগে
- বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের জন্য উপযোগী
- বিনিয়োগ করে অল্প দিনে বেশি লাভবান হওয়া যায়
কোয়েল পাখির বাচ্চার ব্রুডিং এবং যত্ন
সদ্য ফুটন্ত কোয়েল পাখির বাচ্চা খুবই ছোট থাকে, ওজন মাত্র ৫-৭ গ্রাম। এ সময় যেকোনো রকম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার প্রভাব স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম উৎপাদন এবং বেঁচে থাকার উপর পরে। এ অবস্থায় খাদ্যের প্রয়োজনীয় পুষ্টি মান এবং কাম্য তাপমাত্রা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বজায় রাখতে হবে। বাচ্চাকে ব্রুডিং বা তাপ দেয়া খাঁচায় এবং লিটারে করা যায়।
কোয়েল পাখির বাচ্চার বয়স ভেদে তাপমাত্রা
প্রথম সপ্তাহে ৩৫০ সেন্টিগ্রেট ( ৯৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট ) দ্বিতীয় সপ্তাহে 32.20 সেন্টিগ্রেড ( ৯০ ডিগ্রী ফারেনহাইট ) তৃতীয় সপ্তাহে ২৯.৫০ সেন্টিগ্রেট ( ৮৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট ) চতুর্থ সপ্তাহে ২৭.৬০ সেন্টিগ্রেট ( ৮০ ডিগ্রী ফারেনহাইট )। ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফুটার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্রুডিং ঘরে এনে প্রথম গ্লুকোজ এবং এম্বাভিট ডলিউ এস পানির সাথে মিশিয়ে পরপর তিনদিন খেতে দেওয়া ভাল এবং পরে খাদ্য দিতে হবে।
প্রথম সপ্তাহ খবরের কাগজ বিছিয়ে তার ওপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ পরিবর্তন করতে হবে। এক সপ্তাহ পর ছোট খাবার পাত্র বা ফ্লাট ট্রে ব্যবহার করতে হবে। পানির পাত্রে বাচ্চার যেন পড়ে না যায় সেজন্য মার্বেল অথবা কয়েক টুকরো পাথর খাবার পানির পাত্রে রাখতে হবে। সর্বদাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পানি সরবরাহ করতে হবে।
খাচায় কোয়েল পালন
খাঁচায় ৫০ টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১২০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৬০ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ৩০ সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাঁচার প্রয়োজন। খাঁচার মেঝের জালিটি হবে ১৬-১৮ গজ। তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বাসার খাঁচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৩৩ মিলিমিটার এবং ডালে ফাক হবে ৫৫ মিলিমিটার। খাঁচা দুই পাশে একদিকে খাবার পাত্র অন্যদিকে পানি পাত্র সংযুক্ত করে দিতে হবে। খাঁচায় ৫০ টি কোয়েল পাখির জন্য তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট 28 বর্গ সেন্টিমিটার বা ৩ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন।
লিটার ব্যবস্থাপনা
তুষ, বালি, ছাই, কাঠের গুড়া প্রভৃতি দ্রব্যাদি কোয়েলের লিটার হিসাবে মেঝেতে ব্যবহার করা যায়। অবস্থান ভেদে লিটার পরিবর্তন আবশ্যক যেন কোন রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সৃষ্টি না হয়। মেঝেতে ডিপ লিটার পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো। প্রথমে ৫-৬ ইঞ্চি পুরু তুষ বিছিয়ে দিতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন লিটার ভিজা না হয়। স্বাভাবিকভাবে শীতকালে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করতে হবে, অন্য ঋতুতে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করলে লিটারের শতকরা ১-২ ভাগ কলি চুন মিশিয়ে দিতে হবে যেন লিটার শুষ্ক এবং জীবাণুমুক্ত হয়।
কোয়েল পাখি পালনে আর্থিক লাভবান
উৎপাদনের দিক থেকে কোয়েল পাখি অধিক উৎপাদনশীল। একটি মুরগির পরিবর্তে আটটি কোয়েল পাখি পালন করা যায়। অল্প জায়গায় বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া অল্প খরচে পারিবারিক পর্যায়ে অথবা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোয়েল পাখির পালন দেশের পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম।
যদি পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে আপনার মতামত কমেন্টে আমাদের কাছে জানান এবং আমাদের পেজটি দেখতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url