শিশুর বিকাশ বৃদ্ধিতে করণীয়

নবজাতক শিশুর বিকাশ বৃদ্ধিতে ১০টি করণীয়-শিশুর বিকাশ বৃদ্ধিতে যা করবেন

জন্মের প্রথম কয়েক মাস আপনার বাচ্চার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন তার অধিকাংশ পেশি, জ্ঞান, চলাফেরা এবং অন্যান্য দক্ষতার বিকাশ শুরু হয়। এই পর্যায়ে আপনার শিশুর বিকাশের উপর যদি আপনি নজর রাখতে চান তবে আপনার বাচ্চার বিকাশের লক্ষণগুলি বোঝা জরুরী নির্দেশ করে আপনার বাচ্চার যতটা বেড়ে ওঠার কথা সে ততটাই বাড়ছে।
শিশুর বিকাশ বৃদ্ধিতে করণীয়

প্রথম মাসে আপনার নবজাতক শিশুর বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যা তার শারীরিক, বোধ বুদ্ধি সংক্রান্ত, মানসিক বিকাশ, ভাষা সেই সাথে সংবেদনশীলতা এবং অঙ্গ সঞ্চালন বিষয়ক বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে। আপনার এটা জানা জরুরি যে, জন্মের প্রথম কিছুদিনের মধ্যে আপনার সদ্যজাত শিশু ওজন কিছুটা কমবে, অতিরিক্ত পরিমাণ তরল হ্রাস পাওয়ার কারণে। আবার কোন কোন শিশুর ওজন কিছুটা বেড়েও যেতে পারে।

শিশুর বুদ্ধির সঠিক বিকাশে করণীয়

সব বাবা-মা চাঁদ শিশু বেড়ে উঠুক সৃজনশীল মনোভাব নিয়ে, বুদ্ধি বিত্তিতে শেষ সারিয়ে যাক সবাইকে। তবে সেজন্য চাপ প্রয়োগ করে নয় বরং শিশুর জীবনযাত্রার উপরে গুরুত্ব দিয়ে। তার বুদ্ধির সঠিক বিকাশে কি করবেন আর কি করবেন না তা জেনে নিনঃ-

  • শিশুর সঙ্গে প্রচুর কথা বলতে হবে। যাতে শিশুর মনে কোন প্রশ্ন থাকলে বা তাকে নতুন প্রশ্ন করে শিশুর মাথা এবং মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে হবে যাতে শিশুদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
  • শিশুকে অন্যান্য খেলনা এবং সব টয়ের পাশাপাশি বুদ্ধি বাড়বে এমন খেলনা উপহার দিতে হবে
  • শিশু বাচ্চারা যা বলে তা আপনাকে মন দিয়ে শুনতে হবে এবং পরবর্তীতে তাদের ভালোভাবে বোঝাতে হবে কারণ শিশুরা প্রচুর কথা বলতে পছন্দ করে।
  • আপনার শিশুকে ছোট থেকেই বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যস্ত করতে হবে বা উৎসাহী করতে হবে। এতে তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়বে এবং বুদ্ধির ও বিকাশ হবে।
  • কোন শিশু বাচ্চাকে অন্য কোন শিশু বাচ্চার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কারণ প্রতিটি শিশুই আলাদা এবং তাদের বুদ্ধির বিকাশ ও আলাদা থাকে।
  • শিশুর সব কাজ নিজে করে না দিয়ে বরং তাদের কিছু কাজ নিজের মতো করে করতে দেওয়াই উৎসাহিত করতে হবে।
  • শিশুর মানবিক গুণাবলীর বৃদ্ধির জন্য একা একা রুমে বন্দী না রেখে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে।
  • শিশুর খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাবার রাখা দরকার যা শিশুর বুদ্ধি বিকাশ ঘটাতে পারে।
  • শিশুকে রং পেন্সিল দিয়ে তাদের ইচ্ছামত হবে উৎসাহিত করতে হবে।

শিশুর মানসিক বিকাশ বৃদ্ধিতে করণীয়

বর্তমান সময়ে অনলাইনে প্রতি শিশুর আসক্তি কিংবা নির্ভরশীলতার আকার ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল ডিভাইসের উপর অতি নির্ভরশীলতা শিশুর সুরক্ষিত পৃথিবীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। খুব ছোট বয়সে শিশুর কান্না থামানোর জন্য চাঁদ মামা অথবা কাজলা দিদির কবিতা না শুনে তার হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়ার মতো ভয়াবহ কাজটি করে থাকেন আজকের সমাজের অনেক মা বাবা। 

যার ফলে শিশু বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা যা প্রতিটি মুহূর্তে শিশুর জীবনের অদৃশ্য ক্ষতির সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শুধু যে সময়ের ক্ষতি করে তা নয় বরং শারীরিক এমনকি মানসিক সংকট দানা বাঁধে শিশুর মস্তিষ্কে। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা মূলক মনোভাবের প্রয়োজন যা বর্তমান সময় শিশুদের মধ্যে দেখা যায় না। একটা সময় ছিল যখন তার শিশুরা সময়মতো খেলাধুলা করত, লেখাপড়া করত, বিভিন্ন ধরনের গল্প করত এছাড়া বাড়ির বড়দের কাছ থেকে গল্প শোনার বায়না করতো। 

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির এই যুগে এসে রঙিন সময় গুলো হারিয়ে গেছে। যা শুধু সোনালী অতীতের উপর প্রভাব না পড়ে বর্তমান সময়ের শিশুদের শারীরিক ও মানসিক মুহূর্তের উপরে প্রভাব পড়ছে। এতে করে শিশুদের মানসিক বিকাশ বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত পাচ্ছে। ছোটবেলায় শিশুরা যে মন মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবেন তা আজীবন বহন করে চলবে। কারণ শিশুরা উর্বর মস্তিষ্কের অধিকারী। ছোট থেকেই তাদের মস্তিষ্ককে যেভাবে গড়ে তুলবে মস্তিষ্ক তাদের ঠিক সেভাবেই অতিবাহিত বা পরিচালনা করবে। 

সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবী কে বাঁচিয়ে রাখতে বাস্তবমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। পৃথিবীর কোন প্রান্তে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর একটি সুন্দর সমাজ উপহার হিসেবে পাওয়া অধিকার আছে। তবে শিশু বড় হয়ে সেই সৌন্দর্যের পরিচর্যা করতে জানবে। সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শিশুর মেধা ও মন, চিন্তাশক্তি এবং মানসিকতার উন্নয়নে সুস্থ ও সুন্দরের চর্চা করার জন্য প্রতিটি শিশুর একটি অববাদ বিচরণ ক্ষেত্রে প্রয়োজন, যা পরিচর্যা করার দায়িত্ব আমা্র, আপনার, এবং আমাদের।

শিশুর বুদ্ধি বিকাশে যা খাওয়াবেন

বাল্যকালে কোন কোন শিশুর বোধ বুদ্ধি কম থাকে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি। শিশুর কিছু নিয়মিত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। তবে এটাও ঠিক সব খাবারে একই পুষ্টিগুণ থাকে না।

এমন কিছু খাবার আছে যার মধ্যে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার শিশুর মস্তিষ্ক সক্রিয় ও সতেজ রাখে। মস্তিষ্ক সক্রিয় এবং সতেজ থাকলে শিশুর মেধা ও বুদ্ধি বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। আমরা সকলে জানি যে ছোট বাচ্চাদের পাকস্থলী ছোট থাকে তাই তাদের পেট অল্পতেই ভরে যায়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে অল্প পরিমাণ খাদ্য দিয়ে কিভাবে বেশি করে পুষ্টি দিতে পারেন।

শিশুর বুদ্ধি বিকাশে অতীব প্রয়োজনীয় কিছু পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার-

  • পনির, পনির আশে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ দুধ জাতীয় খাবার। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ আমিষ এবং ক্যালসিয়াম যা সুস্থ হার ও দাঁতের জন্য অবশ্য।
  • মায়ের বুকের দুধ শিশুকে অন্তত ৬ মাস খাওয়ানো উচিত। কারণ মায়ের দুধ পান করলে শিশুর বুদ্ধিমত্তা বাড়ে।
  • শাকসবজি
  • ডিম
  • সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল
  • কলা
  • শুকনো ফল
  • বাদাম
  • কালো জাম
  • লাল আপেল
  • কুমড়ার বীজ
  • মধু

উক্ত খাবারগুলো শিশুর বুদ্ধি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উক্ত খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ভিটামিন, আয়রন, এসিড ইত্যাদি নানা ধরনের পদার্থ যা শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি বুদ্ধি বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে করণীয়



'আমার বাচ্চাটা বোধহয় ঠিকঠাক বাড়ছে না' এমন অভিযোগ অনেক মা-বাবায় করে থাকেন। শিশুর বৃদ্ধির নিজস্ব গতি রয়েছে। আর এটাও মেনে নিতে হবে সবাই সমান লম্বা হবে না। একইভাবে সব শিশুর স্বাস্থ্য এক রকম হয় না। পরিবার অন্যদের উচ্চতা কম হলে শিশুর উচ্চতা কম হতে পারে। হরমোন জনিত সমস্যা থাকলে বা শিশু কোন দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলে তার প্রভাব উচ্চতায় পড়ে। তবে হয়ে যাওয়ার পর মেয়েদের উচ্চতা আর খুব একটা বাড়ে না। বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ে কোন দ্বিধা হলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে থাকা ভালো।

শিশুর বিকাশের ধাপগুলো

শিশুর বৃদ্ধি একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এক একটা বয়সে শিশুর এক একটা কাজ করা উচিত। একে বলে বিকাশের স্তর। তবে বয়স অনুযায়ী শিশু কাজকর্ম করছে কিনা সেদিকে নেওয়ার মতো নজর রাখা উচিত প্রত্যেক বাবা-মার। কেননা কোন দুটি বাচ্চার বিকাশ সমূহ গতিতে হয় না। তাই প্রত্যেক অভিভাবককে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।
শিশুর বিকাশের লক্ষণ

শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বিলম্ব হচ্ছে কিনা তা কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যেমন-

  • ২ মাস-কথা বললে হাসে।
  • ৩ মাস-মাকে চিনতে পারে।
  • ৪ মাস-গলা জড়িয়ে ধরা, ঘুরে তাকানো।
  • ৫ মাস-কোন জিনিসের কাছে নিয়ে গেলে তা ধরতে পারা।
  • ৬ মাস-' মা',' বা','দা', শব্দ বলা।
  • ৮ মাস-কারো সাহায্য ছাড়া বসতে শেখা।
  • ৯ মাস-হামাগুড়ি দিতে শেখা।
  • ১২ মাস-দাঁড়াতে শেখা।
  • ১৩ মাস-কোন সাহায্য নিয়ে হাঁটতে শেখা।
  • ২৪মাস-সিঁড়ি দিয়ে ওঠা এবং ছোট ছোট বাক্য বলা।
  • ৩৬ মাস-সাইকেলে চলতে শেখা।
  • ৪৮ মাস-হাত দিয়ে বল ছোঁড়া এবং সিঁড়ির একটা ধাপে একটা পা দিয়ে ওঠা।
  • ৭২ মাস-দেখে দেখে জটিল আকৃতি আঁকতে শেখা।

পরিশেষে

প্রতিটা বাবা মারই স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তান যেন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বেড়ে ওঠে। তাদের সন্তান যেন শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকাশ বৃদ্ধি ও মানসিক বৃদ্ধিতেও সমান হয়ে ওঠে। তাই প্রত্যেক বাবা মারি উচিত শিশুদের প্রতি বিশেষ খেয়াল ও যত্ন নেওইয়ার। শিশুদের মস্তিষ্ক উর্বর। তাদের মস্তিষ্কে যা শেখানো হয় যা বোঝানো হয় তা নিয়ে আজীবন বয়ে চলে। তাই শিশুদের বাহ্যিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url