মেয়েদের চুল লম্বা ও সিল্কি করার কিছু কার্যকারি টিপস বা উপায়

মেয়েদের চুল লম্বা ও সিল্কি করার কিছু কার্যকারি টিপস বা উপায়

চুল লম্বা হয় না? আজকাল অনেকেরই এটার অভিযোগ। অবশ্য আধুনিক জীবনযাত্রায় এত দূষণ, স্ট্রেস আর পুষ্টির অভাবের মাঝে এটাই তো স্বাভাবিক। চুল সুন্দর রাখতে হলে ভালো মতো ঘুমাতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, চিন্তা মুক্ত জীবন যাপন করতে হবে, চুল পরিষ্কার রাখতে হবে ইত্যাদি আমরা সবাই জানি। কিন্তু চুল লম্বা করতে হলে কি করতে হবে?
মেয়েদের  চুল লম্বা ও সিল্কি করার কিছু কার্যকারি টিপস বা উপায়


সঠিক উপায়ে চুলের পর্যন্ত করলে খুব সহজেই পেতে পারেন লম্বা ও ঘন। তবে পরিচালকের পাশাপাশি আরো প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার, সময়মতো বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পরিমাণ। কারণ নারীর চুলেই সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্যকে স্থায়ী করতে কে না চায়?

চুল সিল্কি করার উপায়

কিভাবে চুল সিল্কি করা যায় বা ঘরোয়া ভাবে চুল সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। সুন্দর এবং ঘন কালো চুলের প্রশংসা শুনতে কে না চাই। প্রতিটা নারী আশঙ্কা করে যে চুলগুলো ঘন কালো, সিল্কি শাইনি এবং ঝলমলে থাকুক সবসময়। অনেকটা সময় এরকম থাকে যেন হালকা বাতাসে তার চুলগুলো খেলা করে বাতাসের সাথে। বর্তমানে নারীদের পাশাপাশি ছেলেদের যত্ন বা সৌন্দর্য নেয়ার ভীষণ ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তারাও সাধারণত ভাবতে থাকে তাদের প্রিয়জনের সামনে তারা তাদের সিল্কি চুলের একটি দারুন স্টাইল দেখাবে।

চুল সিল্কি করার কয়েকটি উপায়

এলোভেরা ও লেবুর ব্যবহার

সাধারণত এলোভেরা যেমন ত্বকের যত্নের জন্য উপকারী তেমনি চুলের যত্নের জন্য এটা অনেকাংশ উপকারী। চুলের জন্য এলোভেরার চেয়ে ভালো উপাদান আর হয়তো পাওয়া যাবে না। সাধারণত চুলের সঠিক পুষ্টি জোগাতে অ্যালোভেরার কোন জুরি নেয়। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা সাধারণত চুলের বৃদ্ধি বজায় রেখে চুলকে সিল্কি এবং সুন্দর করে তুলে দ্রুত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে বানানো যায়-

ব্যবহার বিধি

প্রথমে শুলে শ্যাম্পু করে নিতে হবে এবং শুল ভালো করে ধুয়ে তারপর শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর আপনাকে একটি পাত্র নিতে হবে এবং সেই পাত্রের ২ চামচ এলোভেরা জেল নিতে হবে। তারপর তার সাথে আধা চামচ লেবুর রস মিলিয়ে সেটি ভালো করে নেড়ে একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। সাধারণত এই মিশ্রণটি কাজ করবে একটি ন্যাচারাল কন্ডিশনার এর মত। তবে এই মিশ্রণটি আপনার চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী তৈরি করতে হবে। 

আপনার চুল যদি এক্ষেত্রে অনেক বেশি লম্বা হয় তাহলে আপনি অ্যালোভেরার পরিমাণ রসের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত টেনে টেনে আঙ্গুল দিয়ে তেলের মত লাগাতে হবে এবং ২০ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফে্লুন। এই মিশ্রণটি অবহেলা না করে একাধিকবার ব্যবহার করলে বুঝতে পারবেন আপনার চুল হয়ে উঠছে রেশমি, ঝলমলে ও সিলকি।

পাকা কলা ও মধুর প্যাক

কলার উপকারিতার কথা আমাদের কারোরই অজানা নয়। সাধারণত চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করতে এটি একটি অসাধারণ টনিক হিসেবে কাজ করে থাকে। কলা চুলকে করে তুলে দ্রুত লম্বা, মোলায়েম এবং ঝলমলে। কেননা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম ও ভিটামিন। সাধারণত কলা ফুলের খুশকি দূর করার সাথে সাথে দূর করে থাকে সাহায্য করে। আবার মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুল ভেঙ্গে যাওয়া রোধ করে চুলের উজ্জ্বলতা ও পুষ্টি বৃদ্ধি করে থাকে। চুল ঘন এবং লম্বা করতে হলে মধুর উপকারিতার কোন জোর নেই। মিশ্রণটি যেভাবে তৈরি করবেন এবং ব্যবহার করবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক-

প্রথমে আপনাকে একটি পাকা কলা নিতে হবে এবং সেই কলা ব্লেডারের রেখে ব্লেড করে নিতে হবে একটি পাত্রে। এবার একই সাথে দুই চামচ মধু এবং এক চামচ নারিকেল তেল নিয়ে ভালো করে এই মিশ্রণটি ফুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে ফেলুন তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল সুন্দরভাবে ধুয়ে ফেলুন। যদি আরো ভালো ফলাফল তা উপকার পেতে চান তাহলে এই প্যাকটিস সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন এতে চুল পড়া বন্ধ হয়ে গিয়ে চুল হবে আরো সিল্কি এবং সুন্দর।

ভিটামিন এ ও লেবুর তৈরি প্যাক

চুলের যত্নে আমরা সবাই কমবেশি লেবুর উপকারিতার কথা তো জানি। চুল সিলকি রাখতেও লেবু খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। লেবুতে রয়েছে এবং সাইট্রিক এসিড সাধারণত চুল পড়া কমে চুলের বৃদ্ধি করে থাকে। আর ভিটামিন এ সাধারণত চুল পড়া কমিয়ে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রেখে চুল ঘন করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রোধ করে চুলকে উজ্জ্বল ও সিল্কি করে তোলে

ডিম মধু ও লেবুর প্যাক

আপনার চুল পড়া বন্ধ শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুল মজবুত লম্বা এবং ঘন করার জন্য এই তিনটি উপাদান সাধারণত খুবই কার্যকরী। ডিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সালফার যা আপনার চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করে চুলের স্বাস্থ্য খুবই সুন্দর করে তুলে। আর লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সাইট্রিক এসিড এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা সাধারণত চুলকে পুষ্টি লাগে চুলের বৃদ্ধি করে। আর মধু সাধারণত চুলের ফাটা রোধ করে থাকে।

চুল ঘন আর সিল্কি করুন প্রাকৃতিক উপায়ে

সুন্দর চুল পেতে এখন আর পার্লারে সময় কাটানোর প্রয়োজন নেই। বাড়িতে অল্প সময়ের একটু পরিচর্যাতে আপনি পেতে পারেন সুন্দর মসৃণ আর ঘন সিল্কি চুল। বাড়িতে থাকা কিছু উপকরণের মাধ্যমে আপনি আপনার চুলের ফুল চর্চা করতে পারেন। এগুলো হলো-

  • পেঁয়াজ
  • ডিম
  • লেবু
  • অলিভ অয়েল
  • কলা
  • নারিকেলের দুধ
  • মেহেদি

মেথি আর নারীকেলের তেল

চুল সুন্দর আর সিল্কি করতে পেঁয়াজের রস দারুন কার্যকরী। খুশকি দূর করতে কিংবা নতুন চুল গজাতে সপ্তাহে তিন দিন পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে মাথার স্কাল্পে ও চুলে পেঁয়াজের রস দিয়ে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলে প্রোটিনের অভাব দূর করতে একটি ডিম ফেটে তাতে সামান্য লেবুর রস আর অলিভ অয়েল মেশান। এই প্যাক্টি মাথার স্কাল্পে না লাগিয়ে শুধু ফুলে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। 

এরপর এগ প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে নিন।কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এসব অবদান ফুলের গঠন আর বৃদ্ধিতে কাজ করে। তাই চুলের পোস্টটিতে কলার পেস্ট শুনে লাগে অপেক্ষা করতে হবে ১৫ মিনিট এরপর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। নারকেলের দুধের তুলনা হয় না। সপ্তাহে তিন দিন নারকেলের দুধ ঝুলে লাগান এতে আপনার আপনার প্রাণহীন চুল আবার প্রাণ ফিরে পাবে। চুলের যত্নে মেহেদির কথা কারোরই অজানা নয়।

 চুলকে মোটা আর শক্ত করতে কিংবা চুলের গোড়া মজবুত করতে অন্তত একদিন ছেলে মেয়েটি ব্যবহার করা উচিত। চুলের যত্নে নারিকেল তেলের বিকল্প নেই। নারিকেল তেল আমাদের চুলকে বাইরে থেকে সুরক্ষিত রাখে। তেল ব্যবহার করা উচিত এতে চুল সুন্দর আর সিল্কি হয়। নারিকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে তুলে ব্যবহার করলে চুলের গঠন আরো মজবুত হয়। তাই নারকেল তেল আর মেথির জরি মেলা ভার।
মেয়েদের  চুল লম্বা ও সিল্কি করার কিছু কার্যকারি টিপস বা উপায়

চুল ঘন করার ঘরোয়া উপায়

চুল নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন মেয়েরাই। এমন মেয়েদের আপনি খুঁজে পাবেন যারা এখনো করার জন্য বাজারের কোন প্রোডাক্টটি ব্যবহার করতে বাকি রাখেন নি। কোনটাই হয়তো উপকার পান আবার কোনটাই কাজে আসেনা। আবার কোনটা উল্টো ক্ষতি করে বসে। তাই চুল ঘন করার জন্য দুটি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে জানি যেগুলো কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিন দিন খানিকটা সময় বের করে নিয়ে নিম্নে বর্ণিত দুটি স্যার মাস্কের ব্যবহারে পেতে পারেন ঘন, কালো উজ্জ্বল।

ডিম ও অলিভ অয়েল

চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য ডিম ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক প্রাচীন কাল থেকেই। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন যা চুল পড়া রোধ করে। এছাড়া ডিম ও আরো রয়েছে সালফার, জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ও আয়োডিন যার নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।

কিভাবে তৈরি করবেনঃ একটি বাটিতে একটি ডিমের সাদা অংশ নিয়ে তাতে এক চামচ অলিভ অয়েল(জলপাই তেল) ও এক চামচ মধু নিয়ে(চুলের দৈর্ঘ্য ও পরিমাপ অনুযায়ী অলিভ ওয়েল ও মধুর পরিমাণ বাড়াতে পারেন।) উপকরণ গুলো খুব ভালো করে মিশাতে হবে। যখন এ উপকরণটি মসৃণ ম পেস্টের আকার ধারণ করবে তখন মাথার ত্বকে মিশ্রণটি লাগে 20 মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি এবং পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

সরিষার তেল ও মেহেদি পাতা

সাধারণত চুলে সরিষার তেল একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু সরিষার তেল চোরের গুড়া মজবুত করে যা চুল পড়া রোধ করে। এর পাশাপাশি মেয়েটি পাতার নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ফলে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় বেশ কয়েক গুণ।

কিভাবে তৈরি করবেনঃ ২০০ গ্রাম সরিষার তেল একটি পাত্রে নিয়ে বসে দিতে হবে। এবার এতে এক কাপ পরিমাণ মেহেদী তাজা পাতা দিয়ে জাল দিতে হবে। যখন মেহেদী পাতা পুড়ে কালো হয়ে যাবে তখন তা চুলা থেকে নামে সে কে ঠান্ডা করে একটি এয়ার টাইট বোতলে এই তেল সংরক্ষণ করতে হবে। এই তেল সপ্তাহে তিনদিন তুলে লাগালে ফল পাওয়া যাবে। এবং এর চেয়ে ভালো ফল পেতে সারারাত তুলে এই তেল লাগিয়ে রেখে সকালে সাধারণভাবে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুলের যত্নে যে বিষয়গুলোর উপর বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত-

  • চুল সুরক্ষিত রাখা 
  • ভেজা চুলকে সাবধানে ট্রিট করা
  • সঠিকভাবে শ্যাম্পু ব্যবহার করা
  • নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করা
  • কন্ডিশনার ব্যবহার সঠিকভাবে করা
  • হেয়ার প্রোডাক্ট একই ধরনের ব্যবহার করা
  • চুলে অতিরিক্ত হিট না দেওয়া
  • তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে আলতোভাবে
  • চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহার করতে হবে
  • হট ওয়েল মাসাজ
  • চুলে টিজিং পরিহার করা
  • ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হবে
  • চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা
  • অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার না করা

প্রতিটি মেয়েরই স্বপ্ন সুন্দর ঘন কালো ও ছেলেকে চুল। তাই চুলের যত্নে অবহেলা না করাই ভালো। চুলের যত্নে সব সময় সচেতন থাকায় উত্তম। কারণ নারীরা চুল এই সুন্দর।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url