সঠিকভাবে আমের পরিচর্যা

সঠিকভাবে আমের পরিচর্যা

আমের গুটির মটর দানার মত হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ দেওয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত পনের দিন পর পর সেন্ট দিতে হবে। অর্থাৎ আম গাছে ভরা মুকুলের সময় থেকে শুরু করে ১৫ দিন অন্তর অন্তর আম গাছের গোড়ায় চার বার সেচ দিতে হবে। শেষের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ধরা কমানো যায়।
সঠিকভাবে আমের পরিচর্যা

আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় ও সার ব্যবস্থাপনা

আম হচ্ছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফল। আমকে তাই ফলের রাজা বলা হয়। আমের মুকুল আশা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঙ্খিত ফলন পেতে এই সময় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। কেননা সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আম গাছে সঠিক সময় ও সঠিক মাত্রায় সার, সেচ, পোকামাকড্‌ রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা না করায় আমের ফুল ও ফল ঝরে যায় এবং সামগ্রিকভাবে আমের উৎপাদন ব্যাহত হয়। আম উৎপাদনকারী বাংলাদেশের ১৪ টি জেলার বৃষ্টি উপজেলায় কৃষক পর্যায়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় নিম্নরূপ-

ফসল সংগ্রহের পর আগস্ট মাসের রোগাক্রান্ত মরা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, শাখা প্রশাখা এবং পরগাছা কেটে গাছে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে নিম্ন বর্ণিত উপায়ে সার প্রয়োগ করতে হবে।

আমের মুকুল আসার ৭-১০ দিনের মধ্যে অথবা মুকুলের দৈর্ঘ্য এক থেকে দেড় ইঞ্চি(অবশ্যই ফুল ফুটে যাবার আগে) আমের হপার পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লওপ্রিড(ইমিটাফ, টিডো, কনফিডার) ৭০ ডব্লিউ জি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে জিরো জিরো 0.2 গ্রাম হাড়ে অথবা সাইপারমেথ্রিন(রেলোথ্রিন,কট,রিপকর্ড)১০ ইসি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক এবংএথ্রাকনোজ রোগ দমনের জন্ন্য ম্যানকোজেব(ইন্ডফিল,ডাইথেন,ক্মপ্যানিয়ন) এম ৪৫ বা অন্যান্য অনুমোদিত ছত্রাক নাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে একত্রে মিশিয়ে আম গাছের মুকুল, পাত্‌ শাখা প্রশাখা ও অন্যান্য কাণ্ডে ভালোভাবে ভিজে স্প্রে করতে হবে।    

এরপ.৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে আম মটর দানার আকৃতি হলে একই ধরনের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশ উল্লেখিত মাত্রায় একত্রে মিশিয়ে মুকুল পাতা কান্ড ও শাখা-প্রশাখা ভিজে আর একবার স্প্রে করতে হবে। আম গাছে হপার পোকা এবং এথ্রাকনোজ রোগের হাত থেকে মুকুল রক্ষা করার জন্য উপরোক্ত দুই পদ্ধতিতেই দুইবার কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশকের একত্র প্রয়োগ করায় যথেষ্ট। তবে প্রয়োজনে দুই বা তত থেকে স্প্রে করা যেতে পারে।

এছাড়াও সাধারনত মাঘ-ফাল্গুনে আম গাছে মুকুল ফুল গুটি আসে। আমের এই অবস্থায় ছত্রাক জনিত রোগ পাউডারী মিলভিউ এর আক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত অংশে পাউডারের গুঁড়ার মতো একপ্রকার জিনিস দেখা যা... রোগের ব্যাপক অবস্থা আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে মুকুল ঢেকে যায় এবং আমের গুটি ঝরে পড়ে। তাই পাউডারী মিলভিউ রোগের জন্য ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার সালফার জাতীয় ছত্রাক নাটক যেমন কুমুলাস ডিএফ,ম্যাকসালফার, থিওভিট, রানভি্‌ ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে স্প্রে করতে হয়।

ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক এসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হাড়ে স্প্রে করলেও আমের গুটি ঝরা কমে যায়.১ এছাড়াও প্রতি মুকূলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বরিক অ্যাসিড স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
গাছে সার প্রয়োগ

চারা রোপনের পর গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে স্যারের পরিমাণও বাড়তে হবে। বয়স ভিত্তিতে গাছ প্রত সারের পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হলো-

স্যারের নাম গাছের বয়স(বছর)

                                 ১-৪                         ৫-৭

গোবর(কেজি)                  ২৬.২৫                   ৩৫

ইউরিয়া(গ্রাম)                  ৪৩৭. ৫০                 ৮৭৫

টিএসপি(গ্রাম)                  ৪৩৭. ৫০               ৪৩৭. ৫০

এম ও পি(গ্রাম)                  ১৭৫                     ৩৫০

জিপসাম(গ্রাম)                  ১৭.৫০                  ৩৫০

জিং সালফেট(গ্রাম)              ১৭.৫০                     ১৭.৫০

বোরিক অ্যাসিড(গ্রাম)          ৩৫                         ৩৫

প্রয়োগ পদ্ধতি

নির্ধারিত সম্পূর্ণ পরিমাণ গবর, পি এস পি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বোরিক অ্যাসিড এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি সার সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান দুই ভাগ করে এক ভাগ মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে যখন ফল মটর দানার মত হয় তখন এবং অবশিষ্ট মে মাসের মাঝামাঝি সময় প্রয়োগ করতে হবে। এখানে উল্লেখ যে, গাছের চারদিকে গোড়া থেকে কমপক্ষে এক থেকে দেড় মিটার দূরে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। 

গাছের বয়স বেশি হলে এই দূরত্ব বাড়তে পারে। ছাড় প্রয়োগের পর হালকা দিতে হবে। আম পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নেয় কয়েকটি পর্যায়ে অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে আম ফলে রূপ নেয়। প্রতিটি পর্যায়ে আম গাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দিতে হবে। তবে মুকুল আসার আগে এবং পরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা মুকুল ঝরে পড়ে আমের উৎপাদন বহুল অংশে হ্রাস পায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য

গাছে মুকুল আসার আগে যেমন স্প্রে করার প্রয়োজন নেই তেমনি মুকুল ফোটা অবস্থায় কোনোভাবেই স্প্রে করা ঠিক হবে না। কেননা এই সময় প্রচুর সংখ্যক উপকারী পোকা আম বাগানে আসে এবং পরাগায়নের সহযোগিতা করে। মনে রাখতে হবে যে, গাছে মুকুল আসার পর সঠিকভাবে দুইবার স্প্রে করতে পারলে গাছে প্রচুর আম থাকবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url