তীব্র গরমে এসি বিক্রির হিড়িক


তীব্র গরমে এসি বিক্রির হিড়িক, কেনার আগে যেসব বিষয় মনে রাখবেন

বাংলাদেশের তীব্র গরমে যখন হাঁস পাস অবস্থা তখন এই পোস্টটি থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে সিজদা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি কেনার হিরিত করেছে। ঢাকার অনেক ইলেকট্রনিক্সের দোকানে এসি কেনার জন্য ক্রেতাদের চাপ বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, সাধারণত গরমের মৌসুমে এসি বিক্রি বাড়লেও অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার দ্বিগুণ বিক্রি হচ্ছ্‌ যা ছিল তাদের ধারণার বাইরে।
তীব্র গরমে এসি বিক্রির হিড়িক


বিক্রয় কর্মীরা বলছেন, আগে সচ্ছল পরিবারগুলো এসি কিনলেও এখন অনেক স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষও খোঁজ নিতে আসছেন কম খরচে কোন এসি পাওয়া যাবে কিনা। বিক্রেতাদের দাবি, তীব্র দাবদাহের কারণে এখন এসি আর বিলাসবহুল পণ্য নয় বরং জরুরী পণ্যের পরিণত হয়েছে।

এখন গরম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তাপমাত্রা যেভাবে রেকর্ড হারিয়ে গিয়েছে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা না। দোকানে পণ্য তোলার আগেই সোল্ড আউট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, তাপদাহের প্রভাব পড়েছে এসির দামেও। গত বছরের চেয়ে এবারের এসির দাম ব্যান্ড ভেদে 10 হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

 এর কারণ হিসেবে বিক্রেতা বলেছেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে এবং এসি বিলাসবহুল পূর্ণ হওয়ায় দামের উপর প্রভাব পড়েছে। নতুন এসি কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেকে পুরনো এসি ক্রয় করছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ঢাকায় গত ১৫ এপ্রিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যা গত ৫৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

 এছাড়া অন্যান্য দিনও তাপমাত্রা গড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। এখন যে অসম্ভব গরম, শুধু ফ্যানের বাতাসে হচ্ছে না। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এসি কেনার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এসি ব্যবহারকারী ও এর বিক্রয় কর্মীরা।

কত টন এসি

বাজারে এক টন থেকে চার টনের এসি কিনতে পাওয়া যায়। এখানে টন বলতে এসির ওজন নয় বরং এটি ঘন্টায় কি পরিমান গরম হাওয়া বাইরে বের করতে পারে তার সক্ষমতা বোঝায়। এসি ওয়্যার হাউজের তথ্য মতে, এক টনের এসি প্রতি ঘন্টায় রুম থেকে ১২ হাজার বি টি ইউ(ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) গরম বাতাস অপসারণ করতে পারে। সে হিসাবে, চারটনের এসি ৪৮ হাজার বিটিইউ টা বের করতে পারে। আপনার কত টনের এসি প্রয়োজন সেটি নির্ভর করে ওই ঘরের আয়তন, ছাদের ঠিক নিচের তলার ঘর কিন্‌ সূর্যের কিরণ কতটা পরছে, ঘরের সঙ্গে সংযুক্ত টয়লেট আছে কিনা এবং ওই ঘরে কতজন মানুষ থাকছেন তার উপর।

 ঘরের আয়তন যদি ১০০ থেকে ১২০ বর্গফুট হয়, সে ক্ষেত্রে এক টন এসি যথেষ্ট। দেড় টন এসি মূলত ১২০-১৫০ বর্গফুট ঘরের জন্য প্রয়োজন। অন্যদিকে ১৫০-২০০ ফুট বা তার বেশি আয়তনের ঘর ঠান্ডা করতে যথেষ্ট। তবে কিন্তু ছাদের নিচের ফ্লোর হলে বা দরজা জানালা দিয়ে সরাসরি রোড ঢুকলে এসির ক্যাপাসিটি বাড়াতে হতে পারে। তাই এসি কেনার আগে ঘরের মাপ নিয়ে যাবেন। প্রয়োজনের চাইতে বেশি টনি রেসিপি কিনলে রুম খুব বেশি ঠান্ডা হয়ে যায়। 

অযথা বেশি বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। অন্যদিকে বড় ঘরে কমটনের এসি লাগালেও ঠান্ডাও হবে না উল্টো কম্প্রেসরে চাপ পড়ে এসি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে কেউ যদি তার বাড়িতে একাধিক এসি বসাতে চান সেক্ষেত্রে একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ানের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে, আপনার বাড়িতে সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ টানা সক্ষমতা আছে কিনা।

ইনভার্টার/নন ইনভার্টার এসি

এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মূল চিন্তার বিষয় হল এর বিদ্যুৎ বিল। সে ক্ষেত্রে বাজারে ইনভার্টার এসি কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রয় কর্মীরা। আমাদের সবচেয়ে বেশি স্টক করতে হচ্ছে ইনভার্টার। কারণ চাহিদা বে... এখন বিদ্যুতের দাম বেশি তাই মানুষ তাই এসি ব্যবহার করলেও বিদ্যুৎ বিল যেন কম আসে। 

ইনভাইটাল এসিতে বিদ্যুৎ বিল কম আসার কারণ হিসাবে জানা যায়, এসেছে থাকায় ইনভার্টার মূলত কম্প্রেসর মোটরের গতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এ ধরনের এসি একবার চালু করা হলে এর কম্প্রেসার মটর ফুল স্পিডে ঘর ঠান্ডা করে। একবার ঘর ঠান্ডা হওয়ার পর কম্প্রেসার নিজে নিজে গতি কমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের রাখে। এই গতি কমিয়ে চলার জন্যই বিদ্যুৎ বিল কম আসে। কিন্তু সব সময় ঘর একই পরিমাণে ঠান্ডা থাকে।

অন্যদিকে নন ইনভার্টার এসির কম্প্রেসার মোটর দ্রুত গতিতে চলে এবং ঘর ঠান্ডা হওয়ার পর একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আবার ঘর গরম হতে থাকলে পুনরায় চালু হয়। প্রতিবার নতুন করে কম্প্রেসার চালু হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। কোম্পানিগুলোর দাবি করে ইনভার্টার এসি ব্যবহার থেকে ব্যবহার করলে সাধারণ এসিড থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।

স্টার রেটিং

অনেক সময় এসির গায়ে স্পিকারে কিংবা এসির বিজ্ঞাপনে এক থেকে পাঁচটি স্টার রেটিং দেওয়া থাকে। এই স্টার দিয়ে মূলত ওই এসির বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার ক্ষমতাকে বোঝায়। যেখানে একটি স্তর বলতে বোঝায় ৮৪৩ মিনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং ঘন্টায় আড়াই থেকে সাড়ে তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। অন্যদিকে ৫ স্টার মানে এসিপি বছরে ৫৫৪ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং এটি সাড়ে তিন থেকে ৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে সক্ষম। অর্থাৎ যত বেশি স্টার তত বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়। যদিও কিনতে গেলে বেশি তার যুক্ত এসির দাম অনেক বেশি পড়ে।

কনডেন্সার ও কম্প্রেসার

এসির মান অনেকটাই নির্ভর করে এর কনডেন্সার ও কম্প্রেশন অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নাকি কপালের তৈরি। সাধারণত ১০০% কপার কন্ডেন্সার ও ১০০ পার্সেন্ট কপার কম্প্রেশন যুক্ত এসি বেস্ট টেকসই হয়। কপারের পরিবহন ক্ষমতা বেশি, বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। কপার শক্তিশালী ধাতু হওয়ায় সহজে নষ্ট হয় না, বেশি চাপ নিতে পারে। ফলে কোন লিকেজ হলেও মেরামত করা যায়, এর ব্যবহার ও নিরাপদ। যেখানে অ্যালুমিনিয়াম কনডেন্সারে এর সুবিধা নেই।

মোটা ব্যাসের সাধারণ টিউবের থেকে কম ব্যাসের বা তার থেকে সাত মিলিমিটার ফিনযুক্ত কনডেন্সারের দক্ষতা বেশি। ভালো মানের এসিতে কুলিং, হিটিং এর পাশাপাশি ঠান্ডা নিয়ন্ত্রণের টাইমার, টার্বো কুলিং, স্লিপিং মুড সহ অনেক অপশন থাক্‌ অনেক এসিতে বিল্ট ইন এয়ার ফিল্টার থাকে, ওয়ারেন্টি ও বিক্রয় পরবর্তী সেবা পাওয়া যায্‌ পার্টস ও টেকে অনেক দিন, এছাড়াও ভালো এসেছে শব্দ কম হয়।

সিপ্লট এসি বনাম উইন্ডো এসি

উইন্ডো এসি সাধারণত জানালার মধ্যে না হলে দেওয়ালের বড় অংশ কেটে বসাতে হয়। এক ইউনিটের এসব এসির দাম সিপ্লট এসির তুলনায় কিছুটা কম হলেও বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। এসব ইসির ইভা পরেটর কয়েল ঘরের ভেতরে অংশে থাকে। যা ঘরকে ঠান্ডা রাখে। অন্যদিকে বাইরের অংশটিতে থাকে কনডেন্সার কয়েল যা ঘরের ভেতরের গরম বাতাস বাইরে বের করে দেয়। তবে এই এসির সমস্যা হল এটির বসাতে জায়গা বেশি লাগে এবং অনেক শব্দ হয়।

 আজকাল বাজারে উইন্ডো এসি তেমন বিক্রি হয় না। সবখানেই সি প্লট দেখা যায়। সি প্লট এসিতে ভেতরে থাকে ওয়াটার/এয়ার কুল্ট কনডেন্সিং ইউনিট। বাইরে থাকে এয়ার হেন্ড লিঙ্ক ইউনিট। ভেতরের ইউনিটে ঠান্ডা বাতাস বের হয় এবং বাইরের ইউনিটের গরম বাতাস বেরিয়ে যায়। কম্প্রিশনটি ঘরের বাইরে থাকায় কোন শব্দ পাওয়া যায় না। ইনডোর ইউনিটটি সাধারণত দেয়ালের উপরের দিকে বসানো হয়। ফ্রি ফ্লট এসির দাম কিছুটা বেশি, ইনস্টলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বেশি। এর মূল সুবিধা এর ব্যবহার সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী।

সাবধানতা

এসি ব্যবহারে ক্ষেত্রে বছরে দুবার এর ফিল্টার পরিষ্কার করার পাশাপাশি দক্ষ টেকনিশিয়ানের সাহায্যে এর কম্প্রেশন সেভ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিক্রয় কর্মীরা। সময় সঙ্গে সঙ্গে সে তোতাপ নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম গুলোতে গ্যাসের মাত্রা কমাতে থাকে। যদি এসিতে গ্যাস রিফিল করতে হয় তাহলে সেটি পরিবেশবান্ধব গ্যাস কিনা অবশ্যই যাচাই করে নেবেন।

 আর ৪১০ এ গ্যাস সবচেয়ে নিরাপদ এবং বায়ুমন্ডলের ওজর লেয়ারের কোন ক্ষতি করে না। এর পরেই নিরাপদ গ্যাস হল আর ৩২, যদিও এটি আর ৪১০ এ গ্যাসের চাইতে কিছুটা বেশি দাহ্য। এই দুটি পূরণ জাতীয় গ্যাস। অন্যদিকে ফ্রেয়ন জাতীয় গ্যাস আর ২২ বিষাক্ত, ও অনিরাপদ বলা হয়। এসি ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল যেন কম আসে সেজন্য তাপমাত্রা ২৫ বা তার ঋষি দিয়ে রাখলে বিদ্যুৎ বিল কম আসে। বারবার এসি বন্ধ ও চালু করল বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url